
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সরস্বতী পুজোর দিন সাতসকালে হইচই পড়ে যায় কালীঘাটে। দেখা যায়, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কাছেই বয়ে যাওয়া আদিগঙ্গায় সাঁতার কাটছেন একদল প্রতিবাদী। হাতে তাঁদের দাবিদাওয়া লেখা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড। সেগুলি আগে থেকেই প্লাস্টিকে মোড়া। জানা যায়, বহু দিন ধরে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে কোনও সুরাহা না হওয়ায় এই বেনজির প্রতিবাদে নেমেছেন পার্শ্বশিক্ষকরা ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা।
ঘটনার ছবি-ভিডিও সামনে আসতেই তোলপাড় পড়ে যায় রাজ্যজুড়ে। কিন্তু এর পরে আরও এক তথ্য সামনে আসে। পার্শ্বশিক্ষকদের সংগঠনের তরফেই দাবি করা হয়, আজ আদিগঙ্গায় যাঁরা সাঁতার কাটছিলেন, তাঁদের কর্মসূচির সঙ্গে পার্শ্বশিক্ষকদের কোনও সম্পর্ক নেই! শুধু তাই নয়, পার্শ্বশিক্ষক মঞ্চ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, তৃণমূলপন্থী একটি সংগঠন এইসব করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে!
বহু বছর ধরেই রাজ্যজুড়ে পার্শ্বশিক্ষকরা নিজেদের অধিকারের দাবিতে সরব। বেতন-সহ নানা বক্তব্য নিয়ে তাঁরা বারবারই মিছিল করেছেন, ধর্না দিয়েছেন, অনশন করেছেন। তাঁদের আন্দোলনকে বদনাম করতেই তৃণমূলপন্থী একটি সংগঠন এ ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে মনে করছে তারা।
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এদিনের প্রতিবাদ প্রসঙ্গে বলেন, “পার্শ্বশিক্ষকরা কোনও দিনই কার্যক্ষেত্রে সফল নন। তার পরেও মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তার পরেও কেবল বিক্ষোভ। আমি নিজে তাঁদের কথা শুনতে রানি রাসমণি রোডে গিয়েছিলাম। অধৈর্য্য হলে হবে না, তাঁদের কী ভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।”
প্রতিবাদীদের দাবি ছিল, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চান। সাত বছরের বকেয়া-ভাতা ছাড়া আরও যা যা প্রাপ্য আছে পূরণ করতে হবে। মাদ্রাসার অনুমোদন দিতে হবে। তা নাহলে তাঁদের সংগঠনের আরও বহু সদস্য জলে নেমে পড়বে বলে হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা। এদিন দেখা যায়, পুলিশ রীতিমতো কাতর অনুরোধ করে প্রতিবাদীদের জল থেকে তুলছেন। আশ্বাস দিচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের কথা শুনবেন বলে।
কালীঘাটে আদিগঙ্গার পাশেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি। স্থানীয় সূত্রের খবর, আজ, মঙ্গলবার সকাল ১০টা ২০ নাগাদ আলিপুর জেলের কাছে প্রথমে পার্শ্বশিক্ষকদের একটি দল জমায়েত করে। সেই দলে পাঁচ ছ’জন পার্শ্বশিক্ষক ছিলেন। আরও একটি জমায়েত হয় আলিপুর পোস্ট অফিসের সামনে। দু’ভাগে ভাগ হয়ে আদিগঙ্গার ধারে এসে পৌঁছন প্রতিবাদী পার্শ্বশিক্ষকরা।
এর পরেই আচমকা কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আদিগঙ্গার খালে ঝাঁপ মেরে বসেন তাঁরা! হাতের প্ল্যাকার্ড ও কাগজগুলি আগে থেকেই প্লাস্টিকে মোড়া ছিল। সেগুলি আবার জামার ভিতরে লুকিয়ে রেখেছিলেন তাঁরা। ফলে সবরকম প্রস্তুতি নিয়েই এই অভিনব প্রতিবাদ কর্মসূচি। জানা গেছে, শিক্ষামিত্র সংগঠনের সদস্য তাঁরা। বেতন-সহ অন্যান্য দাবিতে বহুদিন ধরেই লড়ছেন।
কিন্তু পার্শ্বশিক্ষকদের সংগঠনের তরফে এই প্রতিবাদ অস্বীকার করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে।