
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সারা বিশ্বের তাবড় তাবড় বিজ্ঞানী-গবেষকরা নাওয়াখাওয়া ভুলে একটাই কাজে লেগে আছেন। করোনা ভাইরাসের কোনও টীকা বা ওষুধ রয়েছে কিনা তার সন্ধান চলছে সমস্ত পর্যায়ে। এর মধ্যেই এ দেশের যোগ প্রশিক্ষক বাবা রামদেব দাবি করে বসেছেন, করোনার ওষুধ আবিষ্কার করে ফেলেছেন তিনি। পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের করোনিল। খেলেই সাত দিনে সারবে করোনা, ১০০ শতাংশ নিশ্চিত! সেই ওষুধ নিয়েই বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাঠাল কেন্দ্র। শুধু তাই নয়, এই ধরনের দাবির কোনও পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ না থাকায় ওষুধটির প্রচার, বিজ্ঞাপন, বিপণন– সবই বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
পতঞ্জলির প্রতিষ্ঠাতা বাবা রামদেব আজই সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, তাঁর আবিষ্কৃত আয়ুর্বেদিক ওষুধ “করোনিল এবং স্বসারি” এপর্যন্ত দেশের ২৮০ জন কোভিড পজিটিভ রোগীর উপর পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগ হয়েছিল। তিনদিনের মধ্যে ৬৫% রোগীর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। সংক্রমণ সেরে গিয়ে সকলের শারীরিক অবস্থাই স্থিতিশীল।
রামদেবের দাবি, করোনিলের ট্রিটমেন্টে সাত দিনের মধ্যে ১০০% রোগীর সংক্রমণ কমে গেছে। মৃত্যু একটিও নেই। এই সপ্তাহ থেকে সারা দেশে ৫৪৫ টাকার বিনিময়ে এই ওষুধ পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।
এই নিয়ে আজ সারাদিনই হইচই চলেছে নানা মহলে। রামদেবের দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। সেটাই স্বাভাবিক। যে ওষুধের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব, গবেষণায় তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিখ্যাত ল্যাবরেটরিগুলি, সেই ওষুধ নাকি এমন তুড়িতে আবিষ্কার করে ফেললেন যোগগুরু রামদেব!
এর পরেই আয়ুষ মন্ত্রক পতঞ্জলিকে একটি নোটিস পাঠিয়ে জানায়, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ওষুধের উপাদান কী কী তা জানাতে হবে। তিনি যে রোগীদের উপর গবেষণা করেছেন, তার বিস্তারিত তথ্যও জানাতে হবে। কোন হাসপাতালে এই পরীক্ষা চলেছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য এই সংস্থা আদৌ সরকারের কাছে নাম লিখিয়েছিল কিনা– সবটাই বিশদে জানতে চেয়েছে কেন্দ্র।
আয়ুষ মন্ত্রকের ওই নোটিসে লেখা আছে, “এই দাবির সত্যতা এবং এর পেছনে যে বিস্তারিত ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা থাকার কথা, সে সম্পর্কে কিছুই জানে না মন্ত্রক।” পতঞ্জলি সংস্থার তরফে নতুন এই ওষুধ করোনিল লঞ্চ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই নোটিস এসে পৌঁছয় রামদেবের দফতরে।
পাশাপাশি, যে ওষুধটি সদ্য আবিষ্কৃত হয়েছে উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারে, আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে সেটির কী অনুমোদন ও লাইসেন্স রয়েছে, তাও দেখতে চেয়েছে মন্ত্রক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অর্থাৎ হু-ও বারেবারেই বলেছে, কোভিড ১৯ সারানোর কোনও বিকল্প পথ বা ভ্যাকসিন এখনও মিলেছে বলে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই কোথাও। সারা বিশ্বে এ সম্পর্কে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সেখানে রামদেবের পতঞ্জলির ওষুধ দাবি করছে, ১০০ শতাংশ সেরে যাবে করোনা!
করোনা ঠেকাতে আয়ুর্বেদিক ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কথা বলেছিল আয়ুষ মন্ত্রক। তারপরই পতঞ্জলির সিইও আচার্য বালকৃষ্ণ ঘোষণা করেছিলেন, করোনার সংক্রমণ রুখতে পারে এমন ভেষজ ওষুধের গুণাগুণ পরীক্ষা করছেন তাঁরা। বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক উপাদানের মিশ্রণে তৈরি ওষুধের ক্লিনিকাল ট্রায়ালও শুরু হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন আচার্য বালকৃষ্ণ। তিনি জানিয়েছেন, পতঞ্জলির হাসপাতালগুলিতে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় এই ওষুধের প্রয়োগ হয়েছে। তাতে সুফল দেখা গেছে। দাবি, আয়ুর্বেদিক এই ওষুধে রোগীর সংক্রমণ কমে যাবে ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যেই।
এর পরেই হরিদ্বারে পতঞ্জলির হেডকোয়ার্টারে প্রেস কনফারেন্স করে বাবা রামদেব বলেন, “করোনার ওষুধের জন্য অপেক্ষা করছে গোটা বিশ্বই। আমরা গর্বিত যে প্রথম করোনা চিকিৎসার জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরি করতে পেরেছি। ভাইরাসের সংক্রমণ সারাতে পারবে করোনিল”
পতঞ্জলির তরফে জানানো হয়েছে, গুলঞ্চ, তুলসী ও অশ্বগন্ধার মিশ্রণে তৈরি এই ওষুধ করোনিল। পুরোপুরি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতেই তৈরি করা হয়েছে। রোগীদের শরীরে কোনওরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। সংস্থার দাবি, অনেক দিন ধরেই ওষুধের গবেষণা এবং ক্লিনিকাল ট্রায়াল করেছে পতঞ্জলি রিসার্চ ইউনিট। এই কাজে তাদের পাশে ছিল জয়পুরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স। ওষুধ তৈরি করেছে পতঞ্জলির দিব্য ফার্মাসি।