
রফিকুল জামাদার
বিহার নির্বাচন দেখেই বোঝা গিয়েছিল যে বাংলায় এ বারের নির্বাচনে বুথের সংখ্যা বাড়বে। কারণ, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তাই ভিড় ঠেকাতে গেলে বুথ পিছু ভোটার কমাতে হবে। শেষমেশ হলও তাই। বাংলায় আসন্ন বিধানসভা ভোটে বুথের সংখ্যা এক লাফে অনেকটা বেড়ে গেল। বুথের মোট সংখ্যা দাঁড়াল ১ লক্ষ ১ হাজার ৭৯০, যা গত নির্বাচনে ছিল ৭৮ হাজার ৯০৩। অর্থাৎ এবার বুথের সংখ্যা বাড়ল ২২ হাজার ৮৮৭।
কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এই যে বুথের সংখ্যায় বৃদ্ধি, তা সব থেকে বেশি হচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ক্ষেত্রে। তথ্য বলছে, গত নির্বাচনে যেখানে ৮ হাজার ৫৫০টি বুথ ছিল এই জেলাটিতে, সেটাই এবার বেড়ে হয়েছে ১১ হাজার ২৬৪টি! অর্থাৎ প্রায় তিন হাজার বুথ বাড়ানো হয়েছে এই জেলায়। শুধু তাই নয়, রাজ্যের সব জেলার থেকে বুথের মোট সংখ্যাতেও সবচেয়ে ওপরে আছে এই জেলাই।
রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই দক্ষিণ ২৪ পরগনা নিয়েই ভূরিভূরি অভিযোগ ছিল বিরোধীদের। বিশেষ করে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র নিয়ে সমস্যার শেষ ছিল না। এই কেন্দ্রে প্রথম থেকেই হারছিলেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু পরে দেখা যায়, নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় যেখানে ভোট হয়নি সেখানে একতরফা ভাবে এগিয়ে যেতে থাকেন সাংসদ। এমনকি শুভেন্দু অধিকারীও সম্প্রতি একটি জনসভা থেকে বলেছিলেন, “ডায়মন্ড হারবারে কীভাবে ভোট হয়েছে জানি। ১৬০০ বুথের মধ্যে ৩০০ বুথে ভোট লুঠ করে এক লাখ ভোটে জিতেছে। এসব কারা করেছে তাও জানি। সেই জাহাঙ্গির খানরাই জেপি নাড্ডার কনভয়ে ইট ছুড়েছে।”
এমন পরিস্থিতিতে এই কেন্দ্র আসন্ন নির্বাচনের পাখির চোখ হয়ে উঠেছে, সঙ্গত কারণেই। সেখানেই এক লাফে তিন হাজার বুথ বেড়ে যাওয়াকে নিছক কাকতালীয় বলে মনে করছেন না অনেকেই। বুধবার নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ এসেছে বাংলায়। আসার পরে দু’দিন ধরে তাঁরা রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন, তার পর সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা জানিয়ে দেন একাধিক সিদ্ধান্ত।
বাংলায় নির্বাচনী সন্ত্রাসের ইতিহাস সুদীর্ঘ। সেই ট্রাডিশন সমানে চলছে। অনেকেই মনে করছেন, এ বার ভোটে সন্ত্রাস দমন করাই কমিশনের কাছে চ্যালেঞ্জ।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক আসন্ন নির্বাচনে কোন জেলার জন্য কত বুথের সংখ্যা প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন:

এদিকে আজ, সোমবার নির্বাচন কমিশনের সিইও আরিজ আফতাব এ রাজ্যের জেলা শাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠকে বসেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়ে, সমস্ত বুথই একতলায় করতে হবে, দোতলা বা তার উঁচুতে করা যাবে না। যদি কোথাও দোতলায় বুথ হয়েও থাকে, তবে তা সরাতে হবে। এ জন্য যদি জেলা স্তরে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনা করতে হয়, তবে যেন তাই করেন জেলাশাসকরা। সেসব করার পরে ৩০ তারিখে চূড়ান্ত চিত্র তুলে ধরতে হবে কমিশনের কাছে।
পাশাপাশি, আজ ছিল জাতীয় ভোটার দিবস। এই দিবসকে যে পূর্ণ মর্যাদায় পালন করা হয়েছে, সে বিষয়ে মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় যথেষ্ট সচেতনতা প্রচার করার নির্দেশ দিয়েছেন সিইও। এছাড়াও আজ সিদ্ধান্ত হয়েছে, অনলাইন নমিনেশনের ব্যবস্থা করার জন্য আলাদা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে জেলায় জেলায়।