
শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রতিমামুখের সঙ্গে মানানসই মিষ্টি মুচকি হাসিতেই লুকিয়ে তাঁর সৌন্দর্য্য। সেই সত্তর দশক থেকে সে হাসির ফ্যান বাংলা ছবির আপামর দর্শক। তিনি সোমা দে।
বাংলা ছবির নায়িকা, তার পর নাটক, সিরিয়াল… সবেতেই সোমা দে-র সুষমাদীপ্ত অভিনয় ও আভিজাত্যর পরশ মিলেছে। মাঝে কিছু বছর সোমা দে ছিলেন গ্ল্যামার জগত থেকে দূরে, খবরের বাইরে। নিয়েছিলেন কিছু বছরের বিরতি। কিন্তু তাঁকে দেখার অপেক্ষায় থাকত দর্শক। ‘যমুনা ঢাকী’ সিরিয়ালে বিন্দুবাসিনী দেবী চরিত্র দিয়ে আবার কামব্যাক করলেন সোমা দে। সফল কামব্যাক। সেই বিন্দুবাসিনী দেবী চরিত্র করেই সোমা দে ‘জি বাংলা সোনার সংসার’-এ প্রিয় সেরা অভিনেত্রী হিসেবে বিজয়িনী হলেন। তিয়াত্তর বছর বয়সেও এভাবে স্বমহিমায় ফিরে আসা যায়, প্রমাণ করে দিলেন সোমা দে।
রবিবার সোমা দে-র কাছে যখন ইন্টারভিউয়ের জন্য হাজির হলাম, অভিনেত্রী তখন স্পেশ্যাল চাইনিজ ডিশ রান্না করতে ব্যস্ত। মেয়ে চেন্নাই থেকে কলকাতা মায়ের কাছে এসেছেন কদিনের জন্য। তাই সোমা দে রান্নাঘরে। আবার বিকেলে বেরোবেন ‘যমুনা ঢাকী’ র শ্যুটিং এ। তিয়াত্তরেও এত ব্যস্ত শিডিউল!
দ্য ওয়াল: প্রথমেই অভিনন্দন আপনাকে। প্রিয় সেরা সহ-অভিনেত্রী পুরস্কার পাওয়ার জন্য!
সোমা: ধন্যবাদ। আমার কাছেও খুব চমকপ্রদ ঘটনা এটা। আমি ভাবতেই পারিনি। আমার নামটা ঘোষণা হলে প্রথমে আমি বুঝতে পারিনি যে আমার নাম বলছে। ইনফ্যাক্ট আমি যেতেই চাইনি অনুষ্ঠানে। অ তদূরে ইকো পার্কে যাব না ভেবেছিলাম। কিন্তু সবাই এত করে বলল আর মেয়েও চাইল, মেয়ে কোনওদিন যায়নি আমার সঙ্গে এসব জায়গায়। তাই গেলাম। আমি একেবারেই জানতাম না, বিন্দুবাসিনী রোলটা করে পুরস্কার পাব, তাও সেরা সহঅভিনেত্রীর!

দ্য ওয়াল: আপনার ফিল্ম জগতে আসা কীভাবে?
সোমা: আসলে আমি যে নিজের ইচ্ছেয় ফিল্মে এসেছিলাম তা নয়। আমাকে জোর করেই ফিল্ম জগতে নিয়ে আসা হয়েছিল। রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের হিন্দুস্তান মার্টে একটা বড় স্টুডিও ছিল। স্টুডিওতে কোনও একটা দরকারে ছবি তুলিয়েছিলাম। তো আমার সেই ছবি দেখে ওখান থেকে একজন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে ফিল্মে আসার কথা বলেন। আর আমি কোনও দিন ছায়াছবির জগতে আসার কথা ভাবিইনি। আমার জগতটা ছিল গানের। আমি খুব ছেলেবেলা থেকেই ক্লাসিক্যাল শিখেছি, আমার এক বোন সেতার শিখত, এক বোন গিটার শিখত। আমার বাবা গানবাজনা খুব পছন্দ করতেন। সব বড় বড় ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতানুষ্ঠানে আমরা ছোট থেকেই যেতাম। আলি আকবর, রবি শঙ্কর সকলের গান শুনেছি। একটা গানের পরিবেশে বড় হয়েছি।

ক্লাসিক্যাল বহু বছর শেখার পর আমি ‘গীতবিতান’ থেকে পাঁচ বছরের কোর্স করে প্রথম হয়ে পাশ করেছি। তারপর অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীত, টপ্পা শিখি, উনি যতদিন বেঁচে ছিলেন। সেইসময় বিদেশে ম্যানহাটন বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্রনাথের উপর কিছু একটা করছিল, সেখানে আমি অ্যাপ্লাই করি এবং ওঁরা আমার কাজ আর গানের ব্যাপার আগ্রহী ছিল।

কিন্তু তখনই এল ফিল্মের অফার। অর্চন চক্রবর্তী বলে এক নবীন পরিচালক একটা ছবি করছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনি ‘জীবনের জটিলতা’ অবলম্বনে। গল্পটা ভীষণ ভাল বলে রাজি হয়েছিলাম। প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো। ছবিটা সরকারি অনুদানে হয়েছিল, কিন্তু পুরো ছবি হয়েও ছবিটার হল রিলিজ হয়নি। ওই ছবিটা করতে করতেই নামী প্রযোজক দীনেশ দে আমায় ‘হারায়ে খুঁজি’ ছবির অফার দিলেন। উনি বাঙাল ছিলেন, বললেন, ‘আয়, কইরা দেখ ছবিটা, ভাল লাগব।’ আমার বিপরীতে ছিলেন দীপঙ্কর দে। আমার প্রথম রিলিজড ছবি।

ব্যস, তারপর পরপর ছবি ‘জন্মভূমি’, ‘বিল্বমঙ্গল’, ‘ব্যাপিকা বিদায়’। ভাল লেগেছিল তরুণ মজুমদারের ‘শহর থেকে দূরে’তে কাজ করার সুযোগ পেয়ে। পুরনো ছবিটার রিমেক ছিল। তনু বাবু অদ্ভুত ডিসিপ্লিনড। অনেক কিছু শিখেছি।

শ্যুটিংয়ের চাপে গানটাকে আর পেশা করতে পারলাম না। কিন্তু শ্যুটিং থেকে ফিরেও বাড়িতে ছেলেমেয়েকে হারমোনিয়াম নিয়ে গান শেখাতাম। আজও অবসর সময় গান শুনেই কাটাই।
দ্য ওয়াল: ছবি থেকে সিরিয়ালে এলেন কবে?
সোমা: বিষ্ণু পালচৌধুরীর ‘জননী’। আমার বিপরীতে ছিলেন বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়। সেই প্রথম সিরিয়াল করলাম।
দ্য ওয়াল: আপনি মানেই কিন্তু আজও রানি রাসমণি। আপনার মুখের আদল অবিকল মিলে যায় রানি রাসমণির সঙ্গে।
সোমা: ‘রামকৃষ্ণ’ সিরিয়ালে আমার অভিনীত চরিত্র রাসমণি তো অসম্ভব সুপারহিট হয়েছিল। লকডাউনে স্টারে রি-টেলিকাস্ট হল, এখনও ওটা নিয়ে লোকে ভীষণ ভাবে উচ্ছসিত। অনেকেই বলেন এতগুলো রাসমণি হলেও আপনার মতো অবিকল রাসমণি আমরা আর পাইনি।
আমি একবার এই সিরিয়ালের জন্য দক্ষিনেশ্বরে শ্যুটিং করতে গিয়েছিলাম। ওখানকার মহারাজরা সবাই বলেছিলেন ‘রাসমণি বলতে আমরা যা বুঝি আপনি ঠিক তাই।’ আমি বললাম ‘এইটাই সবচেয়ে বড় পুরস্কার।’
যদিও রানি রাসমণি করে আমি অনেক পুরস্কারও পেয়েছিলাম।
দ্য ওয়াল: মাঝখানে আপনাকে ছোট পর্দা, বড় পর্দায় দেখা যাচ্ছিল না বেশ কিছু বছর। এই বিরতির সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
সোমা: ওই যে সারা রাত কাজ! সিরিয়ালে মাঝে সারা রাত শ্যুট হত, আমি অভ্যস্ত ছিলাম না। ছবিতে তো আউটডোর বাদে রাতে কাজ হত না। সাতটার মধ্যে শ্যুট সেরে বাড়ি ফিরে আসতাম। কারণ আমার ছেলেমেয়েকে দেখা, ওদের পড়াশোনা দেখার ব্যাপার ছিল। কোনও দিকটাই আমি নষ্ট করতে চাইনি। ওদের দায়িত্বটা আমার বড় দায়িত্ব ছিল। পরের দিকে ওরা বড় হয়ে গেলেও আমি রাতে কাজ করিনি। মাঝে সিরিয়ালের শ্যুট সব সারা রাত হত। আমি তখন কাজ করিনি। অনেক অফার এল, ভাল রোল পেলাম। আমি বললাম, করতেই পারব না সারা রাত। এই কারণেই যাত্রা আর মাচা কখনও করিনি। এখনও যাত্রা করার অফার আসে প্রায়ই। করব না বলে দিলাম।
দ্য ওয়াল: আপনার বিরতি নেওয়ার আগে শেষ কাজ কী ছিল?
সোমা: ‘মহানায়ক’, বুম্বার (প্রসেনজিৎ) মায়ের রোল। মানে উত্তমকুমারের মা চপলা দেবীর চরিত্রটা করেছিলাম।
দ্য ওয়াল: তার আগে ২০০৯-১০ সালে ‘অগ্নি পরীক্ষা’ সিরিয়াল হতো। সেখানে আপনার চরিত্র অন্য একজন করতে শুরু করলেন হঠাৎ। আপনি সরে গেলেন কেন?
সোমা: ‘অগ্নি পরীক্ষা’য় আমার চরিত্রটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। হঠাৎ একটা সময় লক্ষ্য করলাম আমার স্ক্রিপ্ট যেটা আসছে, ফ্লোরে গিয়ে বদলে যাচ্ছে। আমার ডায়ালগ অন্য একজনের মুখে চলে যাচ্ছে। বলত এটা তোমার ডায়লগ না। কিন্তু সেগুলো আমারই সংলাপ হওয়ার কথা। একটা সময় দেখলাম সেটা ভীষণ ভাবে চলে গেছে, আমার হ্যাঁ বা না ছাড়া আর কোনও ডায়ালগ নেই। কার মুখে আমার সংলাপ যেত তাঁর নাম আমি আজ আর বলতে চাই না। তক্ষুনি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আর করব না। সেদিন থেকে ক্লোজড করে দিই ‘অগ্নি পরীক্ষা’ চ্যাপ্টার।
দ্য ওয়াল: টলিউডে কামব্যাক সিদ্ধান্ত নিলেন কবে?
সোমা: যখন দেখলাম রাত আটটা পর্যন্ত কাজের ব্যবস্থা ফিরে এসেছে তখন। আমার কাজ করা অভ্যেস, বাড়ি বসে ভালও লাগছিল না। কিন্তু ততদিনে সব নতুন পরিচালকরা কাজ করছেন। এদের আমি কাউকেই চিনি না। এসভিএফের কাজ আগেও করেছিলাম। ওঁদের চিত্রনাট্যকার সাহানার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। সাহানা বলে তুমি আপাতত গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্সে ঢুকে যাও। ‘বাঘবন্দি খেলা’ সিরিয়ালে করলাম কিন্তু করোনা ইত্যাদিতে মেগাটা বন্ধ হয়ে গেল।

দ্য ওয়াল: তার পর ‘যমুনা ঢাকী’র বিন্দুবাসিনী দেবীর অফার এল কীভাবে?
সোমা: আবার যখন লকডাউন উঠলে সিরিয়াল হওয়ার সম্ভাবনা হল, তখন আমি কাউকেই তো চিনি না। কী করে সম্ভব আবার ফেরা! তখন হঠাৎ আমার মেয়ে ফেসবুকে আমার একটা ছবি দিয়েছিল সেইসময়। সেটা দেখে পুষ্পিতা (মুখোপাধ্যায়) বলল, ‘কেন কাজ করছো না, এখন তো কাজ করতে পারো।’ পুষ্পিতার সঙ্গে আগেও কাজ করেছি আর ও আমায় খুব ভালবাসে। ও-ই বলল ব্লুজের স্নেহাশিস চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করো। তাই করলাম।
ওঁদের প্রোডাকশন হাউস থেকে আমায় ফোন করে বলল, ‘আপনাকে নিয়ে কি আমরা সিরিয়াল ভাবতে পারি?’ রাজি হলাম। এই শুরু হল বিন্দুবাসিনী। ওটার চরিত্রটাও বেশ প্রধান ভূমিকা, টিপিক্যাল ঠাকুমা চরিত্র নয় এবং আভিজাত্যপূর্ণ। ভাল লাগছে করতে। আর আমায় দর্শকরা আবার চাইছেন, দর্শকদের এই ভালবাসা এবং তার পরে এই পুরস্কার প্রাপ্তিতে সত্যি মনে জোর পেলাম। স্নেহাশিসবাবু এবং পুষ্পিতাকে অনেক ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতা।
একটা মেসেজ আমি রেখে দিয়েছি, কুড়ি বছরের মেয়ে, কলেজে পড়ে সে লিখেছে ‘ছোটবেলা থেকে আমি আপনার ভীষণ ফ্যান। ছোটবেলায় দেখা ‘এক আকাশের নীচে’র আম্মা রূপ আপনি অনবদ্য। আপনাকে অবিকল আমার ঠাকুমাই লাগে। সুমিত্রা মুখার্জী করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু আপনি করার পরেও আম্মা নতুন মাত্রা পেয়েছিল। আর এখন যমুনা ঢাকীতেও ততটাই সুন্দর। ‘এক আকাশের নীচে’র আম্মা করেও পুরস্কার পেয়েছিলাম তখন।
দ্য ওয়াল: আপনার নাটক-মঞ্চের জীবনটা বলুন?
সোমা: নাটক করার খুব ভাল অভিজ্ঞতা রয়েছে। এত ডায়লগ মুখস্থ করে স্টেজে বলব কী করে, খুব ভয় পেয়েছিলাম। আর প্রথমেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ। সৌমিত্রদার সঙ্গে অনেকগুলো কাজ করেছি মঞ্চে পরপর। সবগুলোই হিট। ‘রত্নদীপ’, ‘নামজীবন’, ‘চন্দনপুরের চোর’। ওয়ান ওয়াল নাটক করেছি সৌমিত্রদার সঙ্গে ‘দুর্গেশনন্দিনী’। রঞ্জিত মল্লিকের সঙ্গে ওয়ান ওয়ালে ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ নামভূমিকায় করেছিলাম। খুব হিট হয়েছিল। তারপর রবিদার (ঘোষ) সঙ্গে ‘সাবাশ পেটো পাঁচু’। রবিদার সঙ্গে আরও ভাল সম্পর্ক ছিল কারণ রবিদার স্ত্রী বৈশাখী আমার ছোটবেলার বন্ধু।
দ্য ওয়াল: ইন্ডাস্ট্রির বাইরেও আপনার ফ্রেন্ড সার্কেল ছিল?
সোমা: হ্যাঁ বৈশাখীর সঙ্গে আমার আজও বন্ধুত্ব আছে। ওঁর সঙ্গে তো রবিদার অনেক আগেই আমার বন্ধুত্ব। আর একজন বান্ধবী ইন্দ্রাণী, সিনেমার বাইরের লোক। এই আমরা থ্রি মাস্কেটিয়ার্স। স্কুল-কলেজ পার করে ষাট বছরের ওপর একই আছে বন্ধুত্ব।
আমাদের বাত, শ্লেষ্মা, ইশবগুল খেতে হবে– এসব নিয়ে কিন্তু কথা হয় না, ভীষণ মডার্ন গল্প হয়। আমাদের প্রচুর গানের স্টক, গানেগানে কথা বলি। আমার ৭৩ বছর বয়স হয়ে গেলেও আজও মনটা ৩৭-এ আটকে আছে। শ্যুটিংয়েও বাচ্চা মেয়েদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব। ওঁরা আমায় ডাকে মা বলে কিন্তু আমি ওদের বন্ধু।
দ্য ওয়াল: এবার আসি আপনার ব্যক্তিগত জীবনে। আপনার স্বামী সন্তানদের কথা কিছু বলুন?
সোমা: হাজবেন্ডের ব্যাপারে সেভাবে বলার কিছু নেই। ওঁর সঙ্গে আলাপ আমার কেরিয়ারের শুরুতেই, ওই ‘জীবনের জটিলতা’ ছবি করতে গিয়েই। আমাদের বিয়ে হয়, ছেলেমেয়ে হয়। তারপর একটা দুরত্ব তৈরি হয় বৈবাহিক সম্পর্কে। তখন থেকেই আমি ছেলেমেয়েদের নিয়ে আলাদা থাকি। এমনি যোগাযোগ আছে ওঁর সঙ্গে, কথা হয়। কিন্তু আলাদা থাকি। সুস্থ সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছি।
দ্য ওয়াল: আপনার স্বামীকে নিয়ে একটা রটনা আছে বহুদিনের। বলতে পারি কি?
সোমা: কী বলুন তো?
দ্য ওয়াল: দীপঙ্কর দে এবং সোমা দে, দু’জনে স্বামী-স্ত্রী ছিলেন! কী বলবেন এই বাঙালির মিথ নিয়ে?
সোমা: এটা এত বাজে এবং হাস্যকর গুজব যে কী বলব। যেহেতু দীপঙ্কর আর আমার দুজনের পদবীই দে এবং আমাদের বেশ কতগুলো ছবি পরপর হিট করে গেল, জুটিটা হিট করে গেল, তখন পদবী মিলিয়ে এই ফেক দম্পতি গুজব রটিয়েছে যতদূর। আমার স্বামীর টাইটেল চ্যাটার্জী।

আমার স্বামীর সঙ্গে দূরত্ব এসেছে, সেটা আমার ব্যক্তিগত কারণে মতের মিল হয়নি। কিন্তু দীপঙ্কর দে কখনই কারণ হয়ে দাঁড়াননি আমাদের দাম্পত্যে। কোনও থার্ড পার্সেনই নয়।
আমার সঙ্গে আজ অবধি কোনও দিন কাউকে নিয়ে এধরনের ঘটনা ঘটেনি। আমার চারপাশে সবসময় একটা লক্ষণরেখা থাকত। আমার পর্দার এপারে কিন্তু কোনও দিন কেউ আসতে পারেনি। অনেকে যে চেষ্টা করেনি তা নয়। আমি তো বম্বেতেও কত ছবির অফার ছেড়ে দিয়েছি। ফিল্মফেয়ারে যখন আমায় আমন্ত্রণ করেছিল তখন শক্তি সামন্ত আমায় বারবার অফার দিয়েছিলেন। বলেছিলেন ‘রিঙ্কুকে আমি কোথায় তুলে দিয়েছি।’ আমি বলেছিলাম ‘আমি উঠতেই চাই না।’
বিআর চোপড়ার মতো ভাল ও ভদ্র মানুষ আমি জীবনে দেখিনি। কিন্তু আমার ছেলেমেয়েকে ছেড়ে বম্বেতে থেকে যাওয়ার ইচ্ছেই ছিল না।
আমি জীবনে কোনও দিন পার্টিতে যাইনি। অনেকেই বলত ‘তুমি পার্টি যাচ্ছো না, কাজ পাবে!’ আমার ওভাবে কাজ দরকার নেই। যা পেয়েছি তাতেই খুশি। টাকার পেছনে কোনও দিনই ছুটিনি। আমি স্টুডিওতে যাই, প্যাক আপ হলেই গাড়ি নিয়ে সোজা বাড়ি। কতক্ষণে ছেলেমেয়েদের মিট করব।
দ্য ওয়াল: ছেলেমেয়ের কথাই আসি?
সোমা: ছেলে, বৌমা আমার সঙ্গেই থাকে। ছেলে স্যমন্তক বড় আর মেয়ে যাজ্ঞসেনী ছোট। মেয়ে যাজ্ঞসেনীর ছোট থেকেই নাচের প্রতি ঝোঁক। পড়াশোনাতেও ও ভাল, হিউম্যান রাইটস নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টপ, কিন্তু ও নাচটাকেই ভালোবাসে। সেই ওঁর চেন্নাই যাওয়া। কোনও দিন ভাবতে পারিনি মেয়েকে একা চেন্নাই ছাড়ব। নাচে এমএ করল চেন্নাই গিয়ে। ওখানকার হেড অফ দ্য ডিপার্টমেন্ট ওকে কন্যাসমা ভালবাসা দিয়ে আগলে রেখেছেন। সে জন্য এখানে আমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারি।
দ্য ওয়াল: এখনও শ্যুটিং করছেন, কাজে আছেন তবু অবসর সময় কাটান কীভাবে?
সোমা: রান্না আমার প্যাশন। স্পেশ্যাল রান্না। মেয়ের জন্মদিন ছিল, পোলাও আর পাঁচ রকমের মাছ করলাম। কেকটাও আমিই বানিয়েছি রাতে শ্যুটিং থেকে ফিরে। রান্না করতে এবং লোককে খাওয়াতে আমি ভীষণ ভালবাসি। আর গান শোনা তো আছেই—টপ্পা, ঠুমরি, গজল।
দ্য ওয়াল: অভিনয় জীবনে অপ্রাপ্তি আছে?
সোমা: অপ্রাপ্তি আমার দুটো আছে।
এক, উত্তমকুমারের নায়িকা হয়ে ‘বিকেলে ভোরের ফুল’ ছবি করার কথা আমার ফাইনাল হয়ে গেছিল। পরিচালক পীযুষ বসু স্ক্রিনটেস্ট নিয়ে আমায় নির্বাচন করেন। শেষ মুহূর্তে জানা গেল, ছবিটার ডিস্ট্রিবিউটার হচ্ছেন মামাজি, যাঁর খুব কাছের মানুষ ছিলেন সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়। আমায় সরি বলে ওঁদের সুমিত্রাকেই নিতে হল।
আর দুই, দেবকী বসুর ‘কবি’ ছবির রিমেক ‘কবি’ হয়েছিল পরে। যেটাতে মিঠু মুখার্জী নায়িকা ছিল। ওই রোলটাও আমার করার কথা ছিল। কিন্তু সেখানেও ডিস্ট্রিবিউশানে ছিলেন জং বাহাদুর রানা, যাঁর কাছের ছিল মিঠু। তাই মিঠুই করল ছবিটা।
তাছাড়া আমার কোনও কষ্ট, হতাশা নেই। অনেক টাকা হোক কোনও দিনও চাইনি, শান্তি চেয়েছি। সিলেক্টেড অভিনয় করে, গান শুনে, আনন্দ করে বিন্দাস আছি।