
উষার জন্য কলকাতা থেকে হোমিওপ্যাথি ওষুধ নিয়ে গিয়েছিলেন কোচ নাম্বিয়ার, ৮৮ বছরে তিনিই পেলেন ‘পদ্মশ্রী’
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভারতীয় ক্রীড়াক্ষেত্রে কোচ ও ছাত্রীর এমন অপূর্ব মেলবন্ধন কেউ দেখেনি। বাড়িতে রেখে তাঁর ভরনপোষণের দায়িত্ব নিয়ে ছাত্র কিংবা ছাত্রীকে কোনও কোচ আগামী দিনের পথ দেখাচ্ছেন, এমন অনেক পাওয়া যায় নিদর্শন। কিন্তু স্রেফ একজন ছাত্রীকে ভালমানের অ্যাথলিট করবেন বলে নিজের যাবতীয় শখ, যাবতীয় সাংসারিক দায়িত্ব যে কোচ ত্যাগ করতে পারেন, তিনিই তো মহান।
ভারতীয় অ্যাথলেটিক্স মহলে একটা মিথ রয়েছে। বলা হয়, পিটি উষা না থাকলে কোচ নাম্বিয়ার হতেন না, আবার নাম্বিয়ার না থাকলে উষাকে দেখা যেত না। একজন অন্যজনের পরিপূরক, কোচ ও ছাত্রীর এমন নিদর্শনও বিশ্বেও দুর্লভ।
উষার অ্যাথলিট জীবনে বহু মনিমানিক্য রয়েছে। তিনি সিওল এশিয়াডে সোনা পেয়েছিলেন, তার আগে ১৯৮৪ সালের লস এঞ্জেলস অলিম্পিকে অল্পের জন্য ব্রোঞ্জ হাতছাড়া করেন। সেই অলিম্পিকের দুই মাস আগেও উষা হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে প্রায় শয্যাশায়ী ছিলেন। বিছানা থেকে নামার মতো অবস্থাতেই ছিলেন না।
দেশের নামী চিকিৎসকরা বলেছিলেন অস্ত্রোপচার করাতেই হবে। না হলে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হবেন না। কোচ নাম্বিয়ার কী করবেন ভেবে উঠতে পারছিলেন না। তিনি জানতেন অস্ত্রোপচারের পরে অন্তত তিন মাস বিশ্রামে থাকতে হবে। আর তা যদি হয় অলিম্পিকে নামতেই পারবেন না তাঁর ছাত্রী।

এমন যেখানে অবস্থা, সেইসময় কেরলের কোঝিকোড়ের বাসিন্দা ও এম নাম্বিয়ার খোঁজ পান ভাল হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করালে উষা সুস্থ হয়ে যেতে পারেন। সেইসময় সারা দেশে ডাঃ ভোলানাথ চক্রবর্তীর দারুণ নামডাক। নাম্বিয়ার ফোন করে সরাসরি ছাত্রীর জন্য ওষুধ নিতে চলে এসেছিলেন।
কলকাতার সাইকেন্দ্রে নাম্বিয়ারকে এসে ওষুধ দিয়ে গিয়েছিলেন নামী ওই চিকিৎসক। যাঁর ওষুধ খেয়েই উষা অস্ত্রোপচার ছাড়াই সুস্থ হয়ে ওঠেন। তারপর বাকি জীবনে কী করেছেন, সেটাই ইতিহাস।
একজন ছাত্রীর জন্য কোচের এই আত্মবলিদানের স্বীকৃতি অবশেষে পাওয়া গেল। ৮৮ বছরের প্রবীন কোচকে অবশেষে দেওয়া হল পদ্মশ্রী সম্মান। যিনি এর আগে ১৯৮৫ সালেই দ্রোনাচার্য্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন।
মঙ্গলবার নাম্বিয়ার এই পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হওয়ার দিনে জানিয়েছেন, বেটার লেট দ্যান নেভার। এমনকি তাঁর সেই কিংবদন্তি ছাত্রী উষাও অভিনন্দন জানিয়েছেন স্যারকে। তিনি বলেছেন, স্যারকে অনেক পরে এই স্বীকৃতি দেওয়া হল, আগে দেওয়া হলে সেটি আরও ভাল হতো।
কোঝিকোড়ের বাড়িতে বসে নাম্বিয়ারও বলেছেন, ‘‘আমার বয়স হয়েছে, তাও জীবিত অবস্থায় দেখে যেতে পারলাম আমি পদ্মশ্রী পেয়েছি। তবে আমার শরীরের যা অবস্থা তাতে করে দিল্লিতে গিয়ে পুরস্কার নিতে পারব না। আমার হয়ে ছেলে যোসেফ যাবে পুরস্কার আনতে।’’