
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সিংহের গুহায় ঢুকে সিংহ বধ। গাব্বায় ৩২ বছর ধরে টেস্ট ম্যাচ হারেনি অস্ট্রেলিয়া। আর কোনও দিন জেতেনি ভারত। সেই পরিসঙ্খ্যান বদলে দিল ভারতের তরুণ তুর্কীরা। এর ফলে পরপর দুটি সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে তাদের মাটিতে হারাল ভারত। বর্ডার গাভাসকার ট্রফি নিজেদের কাছেই রাখলেন রাহানেরা।
পঞ্চম দিনে দুরন্ত ব্যাটিং করলেন শুবমান গিল ও ঋষভ পন্থ। দুই তরুণ নিজেদের ছন্দে ব্যাট করলেন। অন্যদিকে একদিক ধরে রাখলেন অভিজ্ঞ চেতেশ্বর পুজারা। তার ফলে টানটান এই থ্রিলারে বাজিমাত করল ভারত। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চতুর্থ ইনিংসে সবথেকে বেশি রান তাড়া করে জিতল ভারত। সেইসঙ্গে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে বর্ডার গাভাসকার ট্রফিও নিজেদের নামে করে নিলেন রাহানেরা।
পঞ্চম দিনে ৩২৪ রান দরকার ছিল ভারতের। গাব্বার এই উইকেটে সেটা মোটেও সহজ ছিল না। কারণ বেশ কিছু জায়গায় ক্র্যাক ওপেন হয়ে গিয়েছিল। তার উপর চতুর্থ দিনের শেষে ব্রিসবেনে বৃষ্টি হওয়ায় পঞ্চম দিনের শুরুতে পিচে যে স্যাঁতস্যাঁতে ভাব ছিল সেটাই কাজে লাগিয়ে বোলিং শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। অষ্টম ওভারে কামিংসের বলে খোঁচা মেরে পেইনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৭ রানের মাথায় প্যাভিলিয়নে ফিরে যান রোহিত শর্মা।
রোহিত আউট হওয়ার পরে দরকার ছিল একটা পার্টনারশিপের। সেটাই করে দেখালেন তরুণ শুবমান গিল ও অভিজ্ঞ চেতেশ্বর পুজারা। দ্বিতীয় জন নিজের সময় নিলেন। অন্যজন আক্রমণাত্মক অথচ সাবলীল ব্যাটিং করলেন। দেখে মনে হচ্ছিল বেশ কয়েকটি টেস্ট খেলে ফেলেছেন গিল। এতটাই পরিণত দেখাল তাঁকে। অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞ পেস অ্যাটাক তাঁকে টলাতে পারেনি।

চলতি সিরিজে নিজের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি করলেন গিল। তিনি হলেন সবথেকে কম বয়সী ভারতীয় ব্যাটসম্যান যিনি চতুর্থ ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি করলেন। আগে এই একর্ড সুনীল গাভাসকারের দখলে ছিল। হাফসেঞ্চুরি করার পরে যেন আরও আত্মবিশ্বাসী দেখাল তাঁকে। লাঞ্চের ঠিক আগেই স্টার্ককে যে ছক্কাটা তিনি মারলেন, তা এক কথায় অবিশ্বাস্য।
লাঞ্চের পরেও নিজেদের পার্টনারশিপ এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে শুবমান-পুজারা জুটি। দেখে মনে হচ্ছিল নিজের টেস্ট কেরিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি এদিন হবে শুবমানের। কিন্তু ৯১ রানের মাথায় লিওঁর বলে লাইন মিস করলেন গিল। ফলে বল তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে স্লিপে স্টিভ স্মিথের হাতে জমা পড়ে।
শুবমানের পরে ব্যাট করতে নেমে যথেষ্ট আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করেন অধিনায়ক অজিঙ্ক্যা রাহানে। হতে পারে একদিকে পুজারা খুব ধীরে খেলায় রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি। ২২ বলে ২৪ করে প্যাট কামিংসের বলে আউট হন রাহানে।
৩ উইকেট পড়ার পরে জুটি বাঁধেন পুজারা ও ঋষভ পন্থ। নিজের সাবধানী ভঙ্গিতে খেলছিলেন পুজারা। অন্যদিকে প্রথমে কিছুটা ধরে খেলছিলেন পন্থ। হাত কিছুটা সেট হওয়ার পরে নিজের আসল চেহারায় এলেন পন্থ। নিজের হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন পুজারা। যদিও ৫৬ করার পরে কামিংসের বলে আউট হয়ে ফিরে যান পুজারা।
তারপরেই ঋষভ পন্থ দেখালেন কেন তাঁকে এত ভালবাসেন বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। পুরো টি ২০-র মেজাজে ব্যাট করলেন পন্থ। ময়ঙ্ক আগরওয়াল আউট হওয়ার পরে কিছুটা চাপে পড়েছিল ভারত। কিন্তু সেই চাপ থেকে দলকে টেনে তুললেন প্রথম ইনিংসের অন্যতম হিরো ওয়াশিংটন সুন্দর ও ঋষভ পন্থ। দু’জনের মধ্যে শুধুমাত্র হাফসেঞ্চুরি পার্টনারশিপই হল না, দ্রুত রান তুললেন তাঁরা।
২২ রানের মাথায় রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে আউট হয়ে সমর্থকদের হৃদস্পন্দন কিছুটা বাড়িয়ে দেন সুন্দর। কিন্তু একাই দাঁড়িয়ে ছিলেন ঋষভ। যেদিন তাঁর ব্যাট চলে সেদিন আর কাউকে দরকার পড়ে না। সেটাই হল। হ্যাজলউডকে চার মেরে তৈরি করলেন ইতিহাস। ৮৯ রানে নটআউট করে থেকে গেলেন পন্থ।
ম্যাচ শেষে ভারতের জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে রাহানেদের ভিকক্ট্রি ল্যাপ বুঝিয়ে দিল এই সিরিজ জয় কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। চোট-আঘাত, বর্ণবিদ্বেষ মূলক মন্তব্য, অস্ট্রেলিয়ার আগ্রাসন, অনভিজ্ঞ দল সব প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দিয়ে ইতিহাস রচল ভারত।