
অশোক মালহোত্রা
হাতের মধ্যে থাকা একটা ম্যাচকে কী ভাবে সুপার ওভারে নিয়ে যেতে হয় সেটা দেখাল কলকাতা নাইট রাইডার্স। বুঝলাম না বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক মরগ্যানের সিদ্ধান্ত। কুলদীপ যাদব, শিবম মাভিদের এক ওভার করে বাকি থাকতেও শেষ ওভারে কেন রাসেলকে নিয়ে এল বুঝলাম না। যেখানে চোটের জন্য রাসেল পুরো রান আপ নিতে পারছে না, সেখানে ওকে যে কেন বল তুলে দিল। শেষ ওভারে ১৮ রান দরকার ছিল। সেটা গিয়ে দাঁড়াল সুপার ওভারে। তাও শেষ বলটা ওয়ার্নার মিস না করলে সেটাও হয়তো হত না।
অবশ্য সুপার ওভারে ম্যাচ জিতল কলকাতা। সেখানেও নায়ক হয়ে উঠলেন লকি ফার্গুসন। মাত্র ২ রান করতে গিয়ে ২ উইকেট পড়ে গেল হায়দরাবাদের। সহজেই ম্যাচ জিতল কলকাতা। তার ফলে ১০ পয়েন্ট নিয়ে টুর্নামেন্টে কিছুটা ভাল জায়গায় পৌঁছে গেল নাইট রাইডার্স।
টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে গেলে এই ম্যাচে জিততেই হত কলকাতাকে। আর তার জন্য দরকার ছিল একটা ব্যালান্সড টিম। যদিও দলে দুটো বদল হল তবুও মনে হয় ফার্গুসন ও কুলদীপকে দলে ফেরানোটা খুব ভাল সিদ্ধান্ত ছিল। আর এই সিদ্ধান্তই কাজ লেগে গেল নাইটদের। বিশেষ করে চোখ কাড়ল ফার্গুসন। ওর শুধু পেস নয়, তার সঙ্গে ভেরিয়েশনও রয়েছে। আর তাতেই ৩ উইকেট নিয়ে বাজিমাত করল ফার্গুসন। সুপার ওভারেও ২ উইকেট তুলে ম্যাচের নায়ক তিনি।
গত দুই মরসুমে কলকাতার জার্সিতে ভাল বল করার পরেও এই মরসুমে শুরু থেকে প্রথম এগারোতে জায়গা হয়নি লকি ফার্গুসনের। আসলে কামিংস থাকায় ওকে নেওয়া হয়নি। কিন্তু আবু ধাবি বা দুবাইয়ের উইকেটে শুধু বলে গতি থাকলেই চলবে না, থাকতে হবে ভেরিয়েশন। আর সেটাই হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে দেখাল ফার্গুসন। বুদ্ধি করে বল করল এই কিউয়ি পেসার। তার সঙ্গে চোখে পড়ল কুলদীপ যাদবকেও।
যেদিন থেকে সুনীল নারিন দলে নেই সেদিন থেকেই খেলানো উচিত ছিল কুলদীপকে। কত ম্যাচ ও কলকাতাকে জিতিয়েছে। কিন্তু এবার দুটো ম্যাচে খারাপ বল করার পরেই ওকে বাদ দেওয়া হয়। ভাল যে এই ম্যাচে ফের কুলদীপকে খেলানো হয়েছে। ওর সঙ্গে বরুণ চক্রবর্তীর জুটি বেশ ভাল হয়েছে। এদিনের বলে অনেকটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে কুলদীপ। যদিও ওর স্পেল শেষ করা উচিত ছিল অধিনায়ক মরগ্যানের।
ফিল্ডিং করার সময় উইলিয়ামসন চোট পাওয়ায় ওর দৌড়তে সমস্যা হচ্ছিল। তাই ওকে ওপেনে নামিয়ে পাওয়ার প্লে-র সুবিধা নিতে চেয়েছিল হায়দরাবাদ। শুরুটা ভাল করেছিল উইলিয়ামসন ও বেয়ারস্ট। কিন্তু পাওয়ার প্লে-র পরে যখনই ফিল্ডিং ছড়িয়ে গেল তখনই সমস্যায় পড়ল ওরা। তাই শুরুটা ভাল করেও মিডল ওভারে পিছিয়ে পড়ল হায়দরাবাদ। বেয়ারস্ট ৩৬ ও উইলিয়ামসন ২৯ করে আউট হয়ে গেল।
আর এবারের হায়দরাবাদ দলের সমস্যা হল মিডল অর্ডারে নেতার অভাব। এতদিন সেই কাজটা উইলিয়ামসন করেছে। কিন্তু আজ ও আগে নামল। মণীশ পাণ্ডেও আউট হয়ে গেল। তাই এদিন একদিক ধরে থাকল ওয়ার্নার। শেষে নেমে বেশ ভাল খেলল তরুণ সামাদ। আর এই ধরনের লো স্কোরিং খেলায় টানটান একটা উত্তেজনা থাকবেই। সেটাই দেখা গেল এদিন।
কলকাতার এই দলটাকে দেখে আমি সবথেকে অবাক হচ্ছি ম্যানেজমেন্টের ভূমিকা দেখে। ৯ নম্বর ম্যাচ হয়ে গেল, এখনও একটা সেট দল খেলাতে পারল না। কোনও ম্যাচে টম ব্যান্টন, কোনও ম্যাচে ক্রিস গ্রিন। আজ আবার লকি ফার্গুসন। অন্যদিকে গত দু’বছরের সেরা প্লেয়ার রাসেল একদম ফর্মে নেই। ব্যাটে রান পাচ্ছে না। দৌড়ানো দেখে বোঝা যাচ্ছে পুরো ফিট নয়। এরকম একটা দলে হাল ধরার লোকই পাওয়া যাচ্ছে না।
আমি প্রথম থেকেই বলে আসছে শুভমান গিল একদিকে ধরে থাকার প্লেয়ার। ওর সঙ্গে একজন ওপেনার দরকার যে দ্রুত রান করবে। সেই কাজটা ত্রিপাঠি শুরু করেছিল কিন্তু আউট হয়ে গেল। বাকিরা সবাই অল্প অল্প রান পেলেও একজন যে ২০ ওভার ধরে খেলবে সেরকম কোনও প্লেয়ার নেই। আগে রাসেলের জন্য এগুলো চোখে পড়ত না। কিন্তু এখন সেটা চোখে পড়ছে। তাও শেষদিকে কার্তিকের ১৪ বলে ২৯ ও মরগ্যানের ২৩ বলে ৩৪ রানের দৌলতে রান ১৬৩ পর্যন্ত যায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর- কলকাতা নাইট রাইডার্স ১৬৩/৫। শুবমান গিল ৩৬, মরগ্যান ৩৪, কার্তিক ২৯। নটরাজন ৪০/২। সানরাইজার্স হায়দরাবাদ- ১৬৩/৬। ওয়ার্নার ৪৭, বেয়ারস্ট ৩৬, ফার্গুসন ১৫/৩। ম্যাচ টাই। কলকাতা নাইট রাইডার্স রানে সুপার ওভারে জয়ী। ম্যাচের সেরা লকি ফার্গুসন।