
বেঙ্গল অলিম্পিক সংস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর দুই ভাই-য়ের ‘গটআপ লড়াই’ কী এবারও? ময়দানে ফের জল্পনা
দ্য ওয়াল ব্যুরো: নির্বাচন এলেই বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের নাম শোনা যায় বাংলায়। না হলে এই সংস্থার সারাবছর কী কাজ করে কেউ জানে না। আদৌ কোনও সভা হয় কিনা, সেই নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।
আগামী ৬ ডিসেম্বর বিওএ-র নির্বাচনের দিন ঠিক হয়েছে। তার মধ্যে দুটি শিবিরে বিভক্ত এই সংস্থা। একটি শিবিরের নেতা অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দাদা, অন্য শিবিরের মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁকে আবার ময়দানে সবাই বাবুন বলে চেনে।
গত শুক্রবার সংস্থার নির্বাচনে দুই পক্ষই তাদের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। একটি প্যানেলের সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন অজিত বাবু, অন্য প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী বাবুন স্বয়ং। অজিত বাবু বর্তমানে রাজ্য অলিম্পিক সংস্থার সভাপতি রয়েছেন, আর সচিব তাঁরই ভাই স্বপন।
গত চার বছর আগেও অলিম্পিক সংস্থার নির্বাচন ঘিরে এমন এক সাজানো প্রতিদ্বন্দ্বিতার মঞ্চ করা হয়েছিল। সেবারও যুযুধান দুই প্রতিপক্ষ ছিলেন অজিত ও স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। সেরকমভাবে বাকি প্যানেলও ঠিক করা হয়। কিন্তু নির্বাচনের একেবারে শেষ গিয়ে দুই ভাই মিলে যাওয়ায় বাকি পদগুলি করা হয় পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতে, কেউ কেউ বলির পাঁঠাও হন।
সেইসময় দুই ভাই-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বাংলার খেলাধুলোর মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছি, ভবিষ্যতেও দাঁড়াব। সেই সম্ভাবনা যে এবারও হতে চলেছে, সেটি ময়দানের অনেক কর্তাই বলছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা জানালেন, ‘‘আমি বলতে পারব না ওনারা কী এবারও সত্যি লড়াই করবেন? না লড়াইয়ের অভিনয় করবেন?’’
ময়দানের একাংশ মনে করেন, মুখ্যমন্ত্রীর ধমকে দুই ভাই অতীতেও এক হয়ে গিয়েছিলেন, আবার এবারও হবেন। তাঁরা বাড়ির ডাইনিং টেবলের সন্ধি ময়দানে দেখাতে চান না বলেই পোষাকি লড়াইয়ের তকমা এঁটেছেন, এমনও বলছেন অনেক কর্তাই। গতবার এই আড়ালে থাকা সন্ধির গুঁতোয় সচিব হিসেবে দাঁড়ানো চন্দন রায়চৌধুরী হেরে গিয়ে বলির পাঁঠা হন। ময়দানের একাংশের অভিযোগ, ময়দানের অন্য কোনও কর্তাকে তাঁরা পদে বসতে দেবেন না বলেই এমন লড়াইয়ের নাটক করেই যোগ্য প্রার্থীদের আসতে দেন না।
এবারও দুই পক্ষ থেকে এমন কিছু কর্তা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, যাদের সংস্থা বেআইনি বলে চিহ্নিত হয়েছে। বিটিটিএ (বেঙ্গল টেবল টেনিস সংস্থা), রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন, এমনকি তার মধ্যে বক্সিং সংস্থাও রয়েছে। যারা বিওএ-র অধিনেই নেই, তাদের সংস্থা থেকে কী করে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দিল, সেই নিয়েও শুরু হয়েছে বিতর্ক।
এই কারণেই বর্তমান সভাপতি অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সেই বিষয় মানতে চান না তাঁর ভাই সচিব স্বপন। তিনি আবার সোমবার নিজেদের গোষ্ঠীর কর্তাদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন। তাঁর দাবি, এভাবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরে কোনও সভাপতি নির্বাচন বাতিল করতে পারেন না।
এই নিয়ে আবার আইনি বিষয় জড়িয়ে রয়েছে বলে অলিম্পিক সংস্থার সভাপতি একজন আইনজীবিকেও রেখেছেন, তিনি আবার প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের সহযোগী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। তিনি এই বিষয়টি নিয়ে কিছুই বলতে চান না। তিনি বলছেন, নির্বাচন হবে কিনা সেটি নিয়ে কাগজপত্তর দেখতে হবে। কারণ এই নির্বাচনের জন্য একজন কমিশনার ঠিক করা হয়েছিল। তিনি কী রিপোর্ট দেন, সেটাই দেখার বিষয়।
এবার আবার অজিত বাবুর সমর্থনে সচিব হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন সিএবি-র প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে। অন্যদিকে বাবুনের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত জহর দাস সচিবের জন্য প্রার্থী হয়েছেন। বড় সমস্যা বেঁধেছে সাঁতারের রামানুজ মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে। তিনি অজিতবাবুকে সমর্থন করছেন যেমন, আবার ভাইয়ের পাশেও রয়েছেন। তাঁর কী ভূমিকা বুঝতে পারছে না দুই শিবিরই।
বিশ্বরূপ এর আগে আইএফএ-রও সচিব হতে চেয়েছিলেন, কিন্ত ময়দানী রাজনীতি ও সমীকরণে তাঁকে টপকে সচিব হয়ে যান জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। এবার কী হবে, সেটি সময়ই বলবে।