
বাবার স্বপ্নকে শক্তি করে এগিয়ে চলেছেন সিরাজ, বর্ণবিদ্বেষের বিষও যাকে পারেনি টলাতে
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাবার একটাই স্বপ্ন ছিল, ছেলে ভারতের জার্সি গায়ে দিয়ে খেলবে। নভেম্বর মাসে আইপিএল শেষ হওয়ার পরেই অস্ট্রেলিয়ার জন্য ঘোষণা করা স্কোয়াডে সুযোগ পান মহম্মদ সিরাজ। ছেলে জাতীয় দলে খেলবে, এই স্বপ্নই তো চিরকাল দেখেছিলেন তাঁর বাবা। কিন্তু পেশায় অটোচালক মহম্মদ ঘৌস ছেলেকে জাতীয় দলের জার্সিতে দেখতে পাননি। ২০ নভেম্বর মারা যান তিনি। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লেও অস্ট্রেলিয়ার জৈব সুরক্ষা বলয় ভেঙে দেশে ফিরতে পারেননি সিরাজ। কিন্তু বাবার স্বপ্নকে বুকের আগুনে পরিণত করে প্রতিদিন এগিয়ে চলেছেন। মাত্র তিনটে টেস্ট খেলে ভারতের পেস আক্রমণের লিডারে পরিণত হয়েছেন তিনি।
ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক দিনের পরিচিত নাম মহম্মদ সিরাজ। হায়দরাবাদের এই পেসার দীর্ঘদিন ভারতীয় এ দলের হয়েও খেলেছেন। আইপিএলেও বিরাট কোহলির দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে খেলেন তিনি। কিন্তু নিন্দুকেরা বলেন, সিরাজের সবথেকে বড় দুর্বলতা হল তাঁর ধারাবাহিকতার অভাব। কিন্তু নিজের দিনে বিপক্ষের ঘুম উড়িয়ে দিতে পারেন তিনি। সেটাই করে দেখিয়েছেন।
অ্যাডিলেডে লজ্জার হারের পর মেলবোর্নে জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছিল সিরাজের। আর অভিষেকেই তিনি নজর কেড়েছেন। তাঁর হয়তো শামি, উমেশ, বুমরাহদের মতো পেস নেই, কিন্তু রয়েছে ধারাবাহিক ভাবে এক জায়গায় বল ফেলে যাওয়ার প্রতিভা। আর এই ধারাবাহিকতার জেরেই প্রথম টেস্টেই উইকেট পেয়েছিলেন।
তাও তো মেলবোর্ন ও সিডনিতে দলে ছিলেন বুমরাহ। তিনি বোলিং ব্রিগেডকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু ব্রিসবেনে এক অন্য সিরাজকে দেখলেন সবাই। মাত্র দুটি টেস্ট খেলা সিরাজকে হতে হয়েছে বোলিং ব্রিগেডের নেতা। কারণ বাকিরা তো তাঁর থেকেও নতুন। আর সেই দায়িত্ব কত ভালভাবে তিনি পালন করেছেন তার পরিচয় সবাই পেয়েছেন। গাব্বায় দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন সিরাজ, যা চলতি সিরিজে কোনও ভারতীয় বোলারের প্রথম পাঁচ উইকেট।
শুধু তাই নয়, সিডনি থেকে ব্রিসবেন, সিরাজকে সহ্য করতে হয়েছে বর্ণবিদ্বেষের তীব্র খোঁচা। সহ্য করেছেন। যখন অসহ্য হয়েছে, প্রতিবাদ করেছেন। তাঁর প্রতিবাদের ফলেই মাঠ থেকে অজি দর্শকদের বের করে দিতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ। আর যত বিদ্রুপ বেড়েছে তত ক্ষুরধার হয়েছে তাঁর বোলিং। সেই বিদ্রুপের শ্লাঘা যেন একের পর এক অজি ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠিয়ে উশুল করেছেন তিনি।
আসলে সিরাজের মনের মধ্যে রয়েছে বাবার স্বপ্ন পূরণের অঙ্গিকার। যে স্বপ্ন পূরণের জন্য বাবার কবরে মাটি দিতে পারেননি তিনি, সেই বাবার একটা স্বপ্নই যে তাঁকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে হায়দরাবাদ থেকে গাব্বায়। একের পর এক উইকেট তুলে আকাশের দিকে তাকিয়ে বাবাকেই হয়তো সিরাজ বলছেন, ‘আমি পেরেছি’।