
দিনে প্র্যাকটিস, সন্ধ্যা থেকে ওষুধের দোকানে চাকরি করেও মহামেডানের ভরসা ফয়জল
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সকালে মাঠে, বিকেলে ভূমিকা বদলে ওষুধের দোকানে। তাও নিজের দোকান নয়, একজনের দোকানে চাকরি করে যা টাকা আয় হয়, তাতে কোনওভাবে পাঁচজনের পেট চলে যায়। বাড়িতে তিনিই একমাত্র চাকুরে, তাঁর ভরসায় বাবা-মা, দুই বোন।
শুধুমাত্র বাড়ির ভরসা নয়, মহামেডান স্পোর্টিংয়েরও বড় ভরসা এই মুহূর্তে তরুণ মিডফিল্ডার ফয়জল আলি। যিনি আই লিগের ম্যাচে শুধু গোল করে দলকে জেতাননি, বরং সারা ম্যাচে ভাল খেলে ম্যাচের সেরাও হয়েছেন।
ফয়জল আনন্দে ভাসছেন, তিনি বলছেন, ‘‘এবার মনে হচ্ছে স্বপ্ন সফল হতে চলেছে। কত পরিশ্রম করে নিজের জায়গা করতে পেরেছি। হার মানিনি, লক্ষ্য ছিল মহামেডানের জার্সি পরে গোল করব, সেটি করতে পেরে ভাল লাগছে।’’
ফয়জলের জীবনটা বাকিদের থেকে অনেকটাই আলাদা। পার্কসার্কাস জান নগর রোডের ঘিঞ্জি বস্তিতে থাকেন ২২ বছরের এই তরুণ ফুটবলার। বাবা কিছু করেন না, তাই সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব এখনই তাঁর কাঁধে। পার্কসার্কাস চার নম্বর ব্রিজের কাছে ফয়জল একটি ওষুধের দোকানে কাজ করেন। দোকানের মালিককে বলাই রয়েছে, বিকাল চারটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত দোকানে ডিউটি করবেন। তারপর বাড়ি ফেরা, রাতের খাবার খেয়ে ঘুম, আবার সকালে উঠে প্র্যাকটিসে আসা।
এই নিয়মই চলছে সেই ক্লাস নাইন থেকেই, সেই রুটিনের বদল হয়নি। কলকাতা ‘গোলস প্রজেক্ট’ থেকে উঠে এসে ভবানীপুর ক্লাবে সুযোগ পান ফয়জল। আই লিগ কোয়ালিফায়ারের পরই প্রস্তাব আসে মহমেডানের থেকে। এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে দেরি করেননি তরুণ এই মিডফিল্ডার। মহামেডানের যিনি টিডি সেই শঙ্করলাল চক্রবর্তীই প্রস্তাব দেন ফয়জলকে নেওয়ার বিষয়ে। সেই অনুযায়ী মহামেডান দলের ম্যানেজার বিলাল আমেদ খান ছেলেটিকে সই করান।
মহমেডানের জার্সি পরে গোল করা দারুণ এক অভিজ্ঞতা তরুণ এই ফুটবলারের কাছে। এই প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো। সমস্ত ফুটবলারের স্বপ্ন থাকে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল বা মহমেডানের জার্সি পরে গোল করার। সেটা করতে পেরে আমি দারুণ খুশি।’’
ফয়জল যদিও তাঁর এই জার্নিতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চান পাড়ার এক দাদা জিশানের। মহামেডানের এই তরুণ প্রতিভা বলছিলেন, ‘‘জিশান ভাই আমার জন্য যা করেছে, তা কল্পনাও করা যায় না।’’ জিশানও ওই দোকানে থাকে, ফয়জলকে ছাড় দেয় নিজ দায়িত্বে, এমনকি যখনই আর্থিকভাবে আটকেছেন, জিশানই তাঁর পাশে থেকেছেন। তাই ওঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলছিলেন, ‘‘এগিয়ে যাওয়ার জন্য কাউকে পাশে দরকার হয়, জিশান ভাই আমার জন্য সেটাই করেছে।’’
আই লিগের প্রথম ম্যাচেই গোল। সামনে তাকাতে চান এই প্রতিশ্রুতিমান তারকা। সামনের লড়াই আরও কঠিন, জানেন মহামেডানের মতো বড় দলে নিজের কাজ ঠিকভাবে না করলে কেউ তাঁর জায়গা নিয়ে নেবে, তাই সতর্ক হয়ে চলতে চান। আর বিশেষভাবে প্রশংসা করেন ক্লাবের অন্যতম কর্তা দীপেন্দু বিশ্বাস ও দলের টিডি শঙ্করলাল চক্রবর্তীর।