
দুটি পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত, ডিফেন্সে পুরো ফ্লপ নেভিল, হারের হ্যাটট্রিক ইস্টবেঙ্গলের
নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড : ২
ইস্টবেঙ্গল : ০
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ম্যাচে দুটি পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত হয়েছে লাল হলুদ দল। রেফারি সন্তোষ কুমারের কৃপাদৃষ্টি পেলে ইস্টবেঙ্গলকে হেরে মাঠ ছাড়তে হতো না। তবুও এই হারের পরে ইস্টবেঙ্গলের বিদেশী কোচ রবি ফাউলারের ব্যর্থতা আড়াল করা যাচ্ছে না। তিনি পুরো দলের পরিচালক, তাঁর রিমোট কন্ট্রোলে দল পরিচালিত হচ্ছে। তিনি দলের বিদেশী ফুটবলারদের নির্বাচন করেছেন, কিন্তু তাঁর ওই রিক্রুট কাজে লাগছে না। সেই কারণেই আইএসএলের তৃতীয় ম্যাচে ফাউলারের দল ২-০ গোলে হেরেছে।
লাল হলুদের একমাত্র জ্যাক মাঘোমা ছাড়া কোনও বিদেশী দলের পক্ষে মানানসই নয়। নেভিল, পিলকিনটন পুরো ব্যর্থ। নেভিল বল ধরলেই মনে হয়েছে বিপদ ডেকে আনছেন। পিলকিনটন যে বয়সের ভারে একেবারে পেরে উঠছেন না, প্রতিপদে বোঝা যাচ্ছে। মাঘোমা এগিয়ে থাকলে তাঁকে সাহায্য করার মতো কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।
দলের মাঝমাঠ ও রক্ষণ সম্পূর্নভাবে ফ্লপ। তিনটি ম্যাচ হয়ে যাওয়ার পরেও দলের মধ্যে সেই বিন্যাস দেখা যাচ্ছে না। আক্রমনে উঠলেও তাল কেটে যাচ্ছিল বিপক্ষ বক্সে এসেই। তার মধ্যেও প্রথমার্ধের ২০ মিনিটে মাঘোমাকে অবৈধভাবে ফেলে দেওয়া হয়, রেফারি কাছেই ছিলেন, তিনি পেনাল্টি দেননি। এমনকি দ্বিতীয়ার্ধের মাঝে একটি হ্যান্ডবলের আবেদন ওঠে পিলকিনটনের শটে, তা থেকে রেফারির বাঁশি বাজেনি।
প্রথমার্ধে ইস্টবেঙ্গলের খেলায় কোনও দিশা নেই। গত দুটি ম্যাচে যেরকম কৌশলে খেলেছিল, ঠিক সেই একই কায়দায় তেড়েফুড়ে আক্রমণ করেছে ঠিকই, কিন্তু গোলমুখ খুলতে গেলে যে বুদ্ধি দিয়ে খেলতে হয়, তা দেখা যায়নি।
দলের রক্ষণ ও মাঝমাঠের মধ্যে কোনওরকম সংযোগ নেই। এটি তিনটি ম্যাচের পরেও কেন তা দেখা গেল না, তার জবাব হয়তো ব্রিটিশ কোচ রবি ফাউলার দিতে পারবেন। তিনি দলের সঙ্গে রেখেছেন মোট ছয়জন সহকারি কোচকে, যাঁরা ডেড বল সিচুয়েশন থেকে কিভাবে ফায়দা তুলতে হয়, সেটিও দেখাবেন।
তারপরেও তাঁর দলের এমন হতশ্রী অবস্থা কেন, তার উত্তর তাঁকেই দিতে হবে। ফাউলারের দলে রয়েছেন ভারতের নামী প্রাক্তন ফুটবলার রেনেডি সিং, তাঁর পরামর্শ আদৌ নেওয়া কিনা, সেটিও ভাবার বিষয়। কারণ রেনেডি পরামর্শ দিচ্ছেন, অথচ রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে জেজে, লিংডো, রফিক, বিনিথ, সামাদ আলি মল্লিকদের প্রথম দলে আনা হচ্ছে না, সেটি কেন, তারও কৈফিয়ত চাওয়ার সময় হয়েছে।
ইস্টবেঙ্গলের প্রথমার্ধে বল পজেশন বেশি ছিল। কিন্তু সেটি থাকা মানে ভাল খেলা, কিংবা গোলের আক্রমণ বেশি করা, এটি নয়। বরং জামশেদপুর দলটি অনেকবেশি সংঘবদ্ধ ফুটবল খেলেছে। তারা আক্রমণ উঠতে লাল হলুদের ডিফেন্সকে থরহরি কম্পমান মনে হয়েছে। তারা তিনটি ম্যাচে ৭টি গোল হজম করল। গত ম্যাচে চোট পাওয়া ড্যানি ফক্স মাঠেই নামতে পারেননি।
নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের ৩২ মিনিটে গোলটি পরিকল্পিত আক্রমণ থেকে। সেন্টার লাইন থেকে আফিয়ার পাস ধরে সাইলা এমনভাবে বক্সে প্রবেশ করলেন, সেইসময় ছিলেন সুরচন্দ্র ও নেভিল, কিন্তু দুইজনই ব্যর্থ। বল ক্লিয়ার করতেই পারলেন না, উপরন্তু সুচন্দ্রের পা লেগে বল জালে চলে গেল। গোলটি অবশ্য রেফারি দিয়েছেন সাইলার নামেই। এমনকি ৯০ মিনিটে গোলটি খাওয়ার ক্ষেত্রেও নেভিলের দোষ, তিনি পজিশনেই ছিলেন না।
তারপরেও নর্থ ইস্ট গোলের সুযোগ পেয়েছিল, কাজে লাগাতে পারলে ব্যবধান বাড়ত। দলের তরুণ কোচ নিজের মতো ছক সাজিয়ে লাল হলুদ রক্ষণকে বিব্রত করে গিয়েছেন। কিন্তু সেদিক থেকে চরম ব্যর্থ ফাউলার, এই হারের পরে তাঁর কোচিংয়ের শেষের শুরু হল বটে!
এস সি ইস্টবেঙ্গল : দেবজিৎ মজুমদার, সুরচন্দ্র সিং, স্কট নেভিল, মহম্মদ ইরশাদ (লিংডো), নারায়ণ দাস (অভিষেক আম্বেরকর), শেহনাজ সিং, রোয়ান (রফিক), মাট্টি স্টেইনম্যান, জ্যাক মাঘোমা, বলবন্ত সিং (ভিনিথ), অ্যান্থনি পিলকিনটন।
নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড : গুরমিৎ সিং, আশুতোষ মেহতা, বেঞ্জামিন ল্যাম্বোট, গুরজিন্দার কুমার, মাশরুফ শেরিফ, খাসা কামারা, লালেঙমাইয়া, নিনথই মিতাই, ইদ্রিসা সাইলা, লুইস মাচাদো, কেইসি আপিয়া।