
১১ গোলের ঐতিহাসিক ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের হার ৬-৫ গোলে, নয়া রেকর্ড ভারতীয় ফুটবলে
দ্য ওয়াল ব্যুরো: একটা ম্যাচে ১১ গোল! মনে হবে যেন বাস্কেটবল ম্যাচের স্কোর। এমন ম্যাচ ভারতীয় ফুটবলে কোনওদিন হয়নি। নয়া রেকর্ড সৃষ্টি হল গোয়ার বাম্বোলিনের মাঠে।
এই রাত ভুলতে চাইবেন সকল ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরাও। বিভীষিকাময় এক রাত দেখল তারা। চলতি আইএসএলের শেষ ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের হার ৬-৫ গোলের ব্যবধানে। তারা অবশ্য জিতেও যেতে পারত, আবার এর চেয়েও বড় ব্যবধানে হারতে পারত। কিন্তু যা হল, তা আইএসএলে কেন আই লিগের ইতিহাসেও নেই। এমনকি ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাস দেখলে এত গোলের সম্ভার কোনও ম্যাচে ঘটেছে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
ম্যাচের ৬০ মিনিটে খেলার ফল ছিল ৩-৩, দশ মিনিটের মধ্যেই ইস্টবেঙ্গলকে রীতিমতো টেক্কা দিয়ে ওড়িশা এফসি ৬-৩ গোলে এগিয়ে যায়। আইএসএলের কোনও ম্যাচে এতগুলি গোল হয়নি।
ওই কথাটাই ঘুরে ফিরে আসছে, ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচের ফল শেষমুহূর্ত না এলে বলা যাবে না। ম্যাচের সময় যত এগিয়েছে গোল হয়েছে, এতদিন পরে মনে হয় ফিফার গো ফর গোল-স্লোগানের সার্থক রূপায়ণ ঘটেছে।
বিরতিতে ইস্টবেঙ্গল ২-১ গোলে এগিয়ে ছিল। সেই ম্যাচই বারবার রং বদলে শেষমেশ হয়েছে ৬-৫ ফলে। বাকি সাতটি গোল হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে। এই ম্যাচ এবার আইএসএলের সেরা ম্যাচও বলা যেতে পারে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বোঝা যায়নি কে জিতবে।
সব থেকে বড় কথা, খেলায় কে গোল করলেন, হিসেব রাখাও গণ্ডগোলের। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গোল হয়েছে। বিরতির আগে পর্যন্ত লাল হলুদ দল পিলকিনটন ও ওড়িশার রবি কুমারের দেওয়া আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে ছিল। বাকি দুটি গোল করেছেন হলওয়ে ও জেজে।
ওড়িশার কাছে এই ম্যাচ স্বপ্নের মতো। তারা প্রথমার্ধে এক গোলে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধে করেছে ছয়টি গোল, এই প্রত্যাবর্তন বিশ্ব ফুটবলে কম রয়েছে। নেই বললেই চলে। বিরতির পরে প্রথম ছয় মিনিটে দুটি গোল করে তারা ৩-৩ করে ফেলেছিল। তাদের প্রতিটি গোল যেন লাল হলুদ রক্ষণে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। ওড়িশার হয়ে জেরি, স্যামুয়েরা গোল করে ম্যাচে ফুল ফুটিয়েছেন। তারা হয়তো ২০ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার একেবারে শেষে দৌড় থামাল, কিন্তু এদিনের জয় তাদের ইতিহাসে স্থান করে দিয়েছে, বলা যেতেই পারে।
শনিবার ২৪ মিনিটে পিলকিনটনের গোলে প্রথম এগিয়ে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু দলের রক্ষণভাগ এতই কমজোরি যে, স্ট্রাইকাররা গোল করলেও ড্যানি ফক্সদের ভুলে সেই গোল ধরে রাখা যাচ্ছে না। এদিনের ম্যাচে সেটি বারবার দেখা গিয়েছে। ফাউলারের দলের ডিফেন্ডাররা বেদম হয়ে গিয়েছেন।
খেলার ৩৩ মিনিটে ওড়িশা এফসি-র ব্র্যাড ইনম্যানের কর্ণার থেকে ১৯ বছরের জেরির কাছে বল এলে জটলার মধ্যে থেকে গোল করে গিয়েছেন। অসহায়ের মতো দাঁড়িয়েছিলেন গোলরক্ষক সুব্রত পাল।
যদিও বেশিক্ষণ সেই সুবিধে অর্জন করতে পারেনি ওড়িশা দলটি। ইস্টবেঙ্গল ফের তিন মিনিট বাদেই, ৩৬ মিনিটে ওড়িশার রবি কুমারের আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে গিয়েছিল লাল হলুদ দল।
এদিনের ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল কোচ রবি ফাউলার নয়টি বদল এনেছেন। গত ম্যাচের শুধুমাত্র দুইজন, সার্থক গোলুই ও হলওয়ে ছিলেন প্রথম একাদশে।
শেষ ম্যাচেও হারের সুবাদে ইস্টবেঙ্গল তালিকায় শেষের দিক থেকে তিন নম্বরে রয়েছে, শেষ করল নয় নম্বরে। ২০ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট পেল তারা। মাত্র তিনটি জয় পেয়েছে, হার নয়টি, ড্র করেছে ৮টি ম্যাচে। সবদিক থেকে তারা চরম ব্যর্থই।