
তিনটি দেশে কোভিডকে ‘ড্রিবল’, মোট ৩০ দিনের কোয়ারেন্টিন পর্ব কাটিয়ে মোহনবাগানে এসেছেন রয় কৃষ্ণ
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আইএসএলে মোট দশটি দলের এত তারকা খেলবেন, এত বিদেশী তারকা এসেছেন নিজ দেশ থেকে। কিন্তু তাঁর মতো অভিজ্ঞতা কারোর হয়েছে কিনা সন্দেহ।
মোহনবাগানের নামী বিদেশী তারকা রয় কৃষ্ণ গোয়া শিবিরে যোগ দিয়েছেন তিনটি দেশে করোনাভাইরাসের মতো মারণরোগকে ড্রিবলিং করে। মোট ৪০ দিন লেগেছে তাঁর ফিজি থেকে ভারতে আসতে। মোট দশবার তাঁর কোভিড টেস্ট হয়েছে।
৩৩ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার মোট ৩০ দিন কোয়ারেন্টিন পর্ব কাটিয়েছেন তিনটি দেশে। প্রথমে তিনি ফিজির লাসাবা অঞ্চল থেকে ফিজি মেইন এয়ারপোর্টে এসেছেন। তারপর সেখান থেকে ‘ফিজি টু অকল্যান্ড’ (নিউজিল্যান্ড), তারপর ‘অকল্যান্ড টু সিডনি’ (অস্ট্রেলিয়া), তারপর ‘সিডনি টু দিল্লি’, তারপর ‘দিল্লি টু গোয়া’ এয়ারপোর্টে এসে নেমেছেন।
প্রতিটি দেশে নেমেছেন, আর করোনা কালের নিয়ম পালন করেছেন। হোটেলের ঘরগুলিতে একাই থাকতেন। সেই অভিজ্ঞতার কথা বলতে গেলে এখনও যেন কেমন একটা ঘোরে থাকেন। বলেছেনও, ‘‘আমি যাত্রাকালে যে সব ঘটনার মুখোমুখি হয়েছি, কোনওদিনই ভুলব না। আমি সবসময় একটা আতঙ্কে থাকতাম, হাতে সর্বদা থাকত স্যানিটাইজার, মাস্ক তো থাকতই।’’
গত মরসুমে তিনি ছিলেন এটিকে দলের প্রকৃত তারকা, তাঁর দুরন্ত পারফরম্যান্সের সুবাদেই দলের খেতাব জয় সহজ হয়েছিল। ২১টি ম্যাচে তিনি গোল করেছিলেন ১৫টি। গতবার তিনি ছিলেন দলের নেতা, এবারও কোচ হাবাস কৃষ্ণের হাতেই নেতৃত্ব দেবেন কয়েকটি ম্যাচে। কারণ কোচ এবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দলের নেতা করবেন।
শুক্রবার মোহনবাগান নিজেদের অভিযান শুরু করবে আইএসএলে, বিপক্ষ দল কেরালা ব্লাস্টার্স। যে ম্যাচটির দিকে সকলে তাকিয়ে রয়েছেন, দেখা হবে দুই নামী কোচ হাবাস ও কিবু ভিকুনার লড়াই। ভিকুনা গতবার ছিলেন মোহনবাগানে, সেই জায়গায় হাবাসকে বেছে নিয়েছেন এটিকে কর্তারা। তাই ভিকুনার সামনেও সুযোগ কিছু করে দেখানোর।
রয় কৃষ্ণের দিকে তাকিয়ে থাকবেন দলের সতীর্থরাও। কারণ এতগুলি দেশ ঘুরে এত সুমদ্র পেরিয়ে তিনি শিবিরে এসেছেন। ফিজির এই ভারতীয় বংশোদ্ভুত তারকা জানিয়েছেন, ‘‘আমার একটা সময় হতাশা এসে গিয়েছিল। আমি সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্যে ছিলাম সেটি অকল্যান্ডে। আমাদের যাত্রীদের রাখা হতো আলাদা আলাদা ঘরে, কিন্তু প্রশাসন এতটাই কড়া যে মাত্র এক ঘন্টা আমরা একটু বেরতে পারতাম। ওইসময় আমি গলফ খেলতাম, কিংবা কোনও ইন্ডোর গেমস।’’
এমনকি অস্ট্রেলিয়ায় বিমান ধরার জন্য এত অপেক্ষা করতে হয়েছে, তিনি দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলেন। ১৪ অক্টোবর তিনি দিল্লি আসার বিমান ধরেন। কিন্তু দিল্লি এসেও তাঁকে থাকতে হয় ১৪দিনের কোয়ারেন্টিনে। মোহনবাগানের এই তারকার বক্তব্য, ‘‘মাঝেমধ্যে এত মানুষের সঙ্গে থাকতে হয়েছে, ভয় হচ্ছিল যদি সংক্রামিত হয়ে যাই, কিন্তু হইনি, সেটিকেও ড্রিবলিং করেছি।’’
করোনা কালের এই সময় কোনওদিনও ভুলবেন না তিনি। রয় কৃষ্ণ মনে করছেন, ‘‘এই একা থাকার লড়াই আমার মানসিক কাঠিন্যও বাড়িয়ে দিয়েছে অনেকটাই। এতে হয়তো আমার খেলার মাঠে পারফরম্যান্সেও প্রভাব পড়বে।’’