
মন বলছে জিতুক ইস্টবেঙ্গল, যুক্তি ও অঙ্কে এগিয়ে মোহনবাগান
বিকাশ পাঁজি
আগামী ২৭ নভেম্বর আইএসএলের মহা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের দিকে দুই দলের সমর্থকরা তাকিয়ে রয়েছেন। আমরা প্রাক্তন ফুটবলাররাও সাগ্রহে সেই ম্যাচের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। দারুন একটা খেলা হবে, সেটাই একমাত্র কাম্য।
এই ম্যাচ নিয়ে আগাম কথা বলা যায় না, যেই বলুক না কেন, আমি ওই ম্যাচের ফল মিলিয়ে দেব, সম্ভবই নয়। কোনও খেলারই ফল আগে থেকে বলা যায় না। যখন এমন একটা হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ হয়, যেখানে সেয়ানে-সেয়ানে লড়াইটাই খেলার আকর্ষণ বাড়িয়ে দেবে।
আমি জীবনে মোট কতগুলি ডার্বি ম্যাচ খেলেছি নিজেও জানি না। আমি কোনওদিনই গুনে গুনে ম্যাচ খেলিনি। আর এই ম্যাচের আকর্ষণ সবার থেকে বেশি, এই ম্যাচে প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে দুই দলের ফুটবলাররা। আমরাও তাই করতাম।
কত ম্যাচ এমন হয়েছে, রন্টু (আমার প্রিয় বন্ধু প্রয়াত কৃশানু দে) আগে থেকে হয়তো বলেছে, ওই বড় ম্যাচ আমরা সহজে জিততে পারব না, পরে ওই মোহনবাগান ম্যাচই সহজে বের করে দিয়েছি। দেখা গিয়েছে ওই খেলায় রন্টুই দুরন্ত খেলে মোহনবাগানকে মাটি ধরিয়ে দিয়েছে, আমি ওঁর পাস থেকে গোলও করে গিয়েছি।
শুক্রবারও তাই হবে কিনা জানি না। তবে কয়েকটি লড়াই দেখার জন্য মুখিয়ে থাকব। একটা দল ইতিমধ্যেই প্রথম ম্যাচ খেলে ফেলেছে, সেই ম্যাচে জিতেছেও। কিবু ভিকুনার কেরালাকে হারানো সহজ ছিল না হাবাসের দলের কাছে। কিন্তু ওই কাজটি ওরা করেছে সহজভাবেই।
তাই মোহনবাগানের সব দিক থেকে সুবিধে ডার্বি ম্যাচে। ওরা নিজেদের দলটিকে বুঝে নিতে পেরেছে, কার কোথায় ঘাটতি, কার কোথায় শক্তি, সেটি পরখ করে নামতে পারবে। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল প্রথম ম্যাচ খেলবে। তাও আবার একটি নতুন দল নিয়ে। যে দলের ফুটবলাররা আগে কোনওদিন একসঙ্গে একটি ম্যাচও খেলেনি।
হয়তো একটা প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলেছে কেরল দলের বিপক্ষে। কিন্তু একটা প্র্যাকটিস ম্যাচের ওপর নির্ভর করে বড় ম্যাচ জেতা যায় না। ইস্টবেঙ্গলে বিদেশীরা কে কেমন খেলে, কে কেমন কন্ডিশনে রয়েছে, আমি জানি না। সব ফুটবলাররাই বড় মানের, কিন্তু সেটি মাঠে নামার আগে কাগজে-কলমে, কিন্তু মাঠে নেমে তাদের কার্যকারিতা কী হবে কেউ জানে না।
মোহনবাগানের কোচ হাবাস, আর লাল হলুদের কোচ লিভারপুল কিংবদন্তি রবি ফাউলার, দুই কোচের কৌশলের লড়াই তো হবেই। একজন স্প্যানিশ, অন্যজন ব্রিটিশ। ফাউলার যদিও চার বিদেশীর খেলা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, কারণ তিনি তাঁদের নিয়ে এসেছেন। বাকিদের খেলার জ্ঞান একটা ম্যাচ না গেলে বোঝা সম্ভব নয়।
মোহনবাগানের আক্রমণে ভরসা রয় কৃষ্ণ, ওই ছেলেটির খেলা বেশ ভাল লাগে। ওর সবচেয়ে বড় গুণ হল গোলমিস করেও হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে যায় না। বরং ভাবে যদি আবার সুযোগ পাই, তা হলে বাজিমাত করব। এটাই একটা গোলগেটারের মনোভাব হওয়া উচিত। মোহনবাগানের মাঝমাঠ ও রক্ষণের মধ্যে বোঝাপড়ার একটা অভাব রয়েছে, ইস্টবেঙ্গল কোচ সেটিকে কাজে লাগাতে পারলে সুফল পাবে।
এই ধরনের ম্যাচে দুটি বিষয় ফারাক গড়ে দেয়, একটা অভিজ্ঞতা ও অন্যটি হল লড়াই করার ক্ষমতা। সেই কাজটি যে দল করতে পারবে ভাল করে, তারাই জিতবে। আমি মোহনবাগানকে এগিয়ে রাখব অঙ্ক ও যুক্তিতে। আর লাল হলুদ দল জিতুক, সেটি আমি চাইব মনেপ্রাণে এক ইস্টবেঙ্গল সমর্থক হিসেবে।