
এই ‘অচেনা ডার্বি’তে মোহনবাগানই ফেভারিট, ফাউলারের দল জিতলে তা হবে অঘটন
মানস ভট্টাচার্য্য
(ভারতের নামী প্রাক্তন ফুটবলার)
এমন এক প্রেক্ষাপটের মধ্যে শুক্রবার বড় ম্যাচটি হতে যাচ্ছে, বেশ দোলাচলের মধ্যে রয়েছি। ফুটবল জীবনে বহু ডার্বি খেলেছি, জিতেছি, আবার হেরেছিও। আমার গোলে ওই ম্যাচে ফয়সালা হয়েছে, এরকমও অনেকবার হয়েছে।
খেলা ছাড়ার পরে যখন ওই ম্যাচের রেডিও কিংবা টিভি কমেন্ট্রি করেছি, সেইসময়ও এত ধাঁধার মধ্যে ছিলাম না, যা এবার ক্রমাগত হচ্ছি।
কিসের ধাঁধা? এরকম অচেনা দুটি বড় দল আমি দেখেনি। নিজ মুখে বলছি বলে নয়, আমার সম্পর্কে ময়দানে একটা ভাল ধারণা রয়েছে। আমি কোনও ম্যাচের ধারাভাষ্য দেওয়ার আগে কিংবা কোনও ম্যাচের বিশেষজ্ঞ কলাম লেখার আগে আমি নিজের চোখে দুটি দলের প্র্যাকটিস দেখে এসে বিশ্লেষণ করি।
কারোর কথায়, কোনও সংবাদমাধ্যমে পড়ে বিশ্লেষণ করা আমার ধাতে নেই। আমি মনে করি নিজে চোখে দেখে ব্যাখ্যা করলে তার আলাদা মাহাত্ম থাকে, যা অন্য কোনওভাবে পূর্ণ করা যায় না।
ধাঁধা এই কারণেই বলছি, এবার মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের নতুন দলটিকে একবারও নিজ চোখে প্র্যাকটিস করতে দেখলাম না, এটাই আফশোসের। কলকাতায় থাকলে ঠিক ঢুঁ মারতাম কোনও না কোনওদিন। কিন্তু এবার আইএসএল হচ্ছে গোয়ায়, তার আগেও দলগুলি শহরে ছিল না। তাই নিজে গিয়ে দলের কন্ডিশন দেখতে পাইনি বলে একটা আক্ষেপ রয়েছে।
হাবাসের দল ও ফাউলারের দলের স্বদেশীদের খেলা আমি আগে দেখেছি, কিন্তু বিদেশীদের নিয়ে কোন ধারণা নেই। রয় কৃষ্ণর খেলা তো গতবারও দেখেছি, কিংবা গার্সিয়া, কিংবা হার্নান্দেজ। কিন্তু লাল হলুদের বিদেশীরা, ড্যানি ফক্স, পিলকিংটন, মাঘোমা, স্কট নেভিল, এদের খেলা প্রিমিয়ার লিগে দেখলেও সাম্প্রতিক সময়ে জানি না কেমন ফর্মে রয়েছে।
এবার যে কতগুলি আইএসএলের ম্যাচ দেখেছি, তাতে বিদেশীরা দারুণ খেলছে, আমি বলব না। বহু তারকার বয়স হয়ে গিয়েছে, ৩৬-৩৭ বছর বয়সে খেলতে এসেছে, সবাই তো আর রোনাল্ডো, মেসি নয় যে ওই বয়সেও দারুণ ফিট থাকবে।
নিজেদের সেরা সময় পেরিয়ে এখানে খেলতে এসেছে, তার মধ্যে করোনা পরিস্থিতির জন্য বহুদিন প্র্যাকটিসের মধ্যে ছিল না কেউ, সেই কারণে খেলার মধ্যে তার প্রভাবও পড়েছে। লকডাউনের সময় তো সবাই ঘরবন্দী ছিল। সেই কারণেই দেখতে পাচ্ছি কেউই বলের কাছে পৌঁছতে পারছে না।
এটা হয়তো ধীরে ধীরে ঠিক হবে, ছন্দ রাতারাতি ফিরবে না। তাই আমিও খুব একটা আশাবাদী নয়, আইএসএলের প্রথম ডার্বি দারুণ উচ্চমানের হবে। তবে যেহেতু বিদেশী তারকারা পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে, সেই জন্য তাদের ব্যক্তিগত মুনশিয়ানাতে কোনও জাদু দেখা যেতে পারে।
এই ম্যাচে মোহনবাগানের হারটাই হবে অঘটনের। কেননা তারা প্রথম ম্যাচ খেলে ফেলেছে, অনেকটাই স্বচ্ছন্দ। সেদিক থেকে লাল হলুদ দল মাঠে নেমেই বাজিমাত করা একটু হলেও চাপের। কিন্তু আবারও বলছি, মাঘোমা, পিলকিংটনদের জাত ভাল, তাই আচমকা কোনও ‘ম্যাজিক’ করে দিলে মোহনবাগানের সর্বনাশ হয়ে যাবে।
হাবাসের খেলানোর স্টাইল সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। তিনি শুরুতে আক্রমণে গিয়ে গোল পেয়ে গেলে রক্ষণাত্মক ছকে চলে যান। সেদিক থেকো কোচ ফাউলার আমাদের কাছে অচেনাই। তিনি ফুটবলার হিসেবে কিংবদন্তি, কিন্তু ভাল ফুটবলার হলেই দক্ষ কোচ হবেন, এমন রসায়ণ তো বেশিরভাগ সময়ে মেলেনি, তাই তাঁকেও দেখতে হবে কোচ হিসেবে কতটা বড়মাপের।
দুটি দলের তত্ত্বগত আলোচনায় আমি যেতে চাইছি না, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, মোহনবাগানের জোড়া ফলা রয় কৃষ্ণ ও ডেভিড উইলিয়ামসের সঙ্গে লড়াই হবে ড্যানি ফক্স ও স্কট নেভিল জুটির। ইস্টবেঙ্গলের সেন্ট্রাল ডিফেন্সের সঙ্গে মোহনবাগানের আক্রমণভাগের দ্বৈরথ দেখব আমরা।
তার মধ্যে যতুটকু জেনেছি ইস্টবেঙ্গল কোচ স্বদেশী ফুটবলারদের পারফরম্যান্স নিয়ে তেমন খুশি নন। সেটিও এই ম্যাচে ফ্যাক্টর হবে অবশ্যই। সেদিক থেকে মোহনবাগানে আইএসএল খেলা ফুটবলারের সংখ্যা বেশি, এমনকি তারা বেশি ডার্বিও খেলেছে, সেই জন্য তারা জানে এই ম্যাচের গুরুত্ব কতটা।
সবদিক থেকেই আমি এগিয়ে রাখব মোহনবাগানকে, ফাউলারের দল জিতলে সেটি হবে বাড়তি কৃতিত্বের, এমনকি অঘটনের ফলও।