
‘নতুন বাড়ি’ সিল, শান্তিনিকেতনে আনন্দ পাঠশালার সামনেই বসন্ত আবাহন আলাপিনীর সদস্যদের
আলাপিনী মহিলা সমিতির সঙ্গে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সমস্যার সূত্রপাত গত বছরের ১০ ডিসেম্বর। সেদিন একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ মহিলা সমিতিকে নির্দেশ দেয় ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাঁদের অধিবেশন গৃহ 'নতুন বাড়ি' খালি করে দিতে হবে। ঠিক কী কারণে এই বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে তা নিয়ে ধন্দে পড়েন সদস্যরা।
দ্য ওয়াল ব্যুরো, বীরভূম: অধিবেশন কক্ষ ‘নতুন বাড়ি’ সিল হয়েছে কবেই। সেই থেকে মৃণালিনী আনন্দ পাঠশালার বন্ধ গেটের সামনে মাটিতে বসে চলেছে আলাপিনী মহিলা সমিতির প্রতিবাদ। এভাবেই প্রয়াণ দিবসে স্মরণ করা হয়েছে মহাত্মা গান্ধীকেও। রবিবার বসন্ত আবাহন করলেন তাঁরা। আবার এও খবর যে বিশ্বভারতীতে সমাবর্তন একেবারে সামনেই। ওই মঞ্চকে ব্যবহার করে সমিতির তরফে খোদ আচার্যকে বিষয়টি জানানোর তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে।
আলাপিনীর সদস্যরা জানান, মাসিক অধিবেশনের অঙ্গ হিসেবে প্রতিবার পয়লা ফাল্গুন বসন্তের আবাহন হয়। অধিবেশন কক্ষ বন্ধ। কাজেই আবারও মৃণালিনী আনন্দ পাঠশালার সামনে ‘নীল দিগন্তে ওই ফুলের আগুন লাগল’, ‘বসন্তে কি শুধু কেবল ফোটা ফুলের মেলা’ সহ অন্যান্য রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া হয়।
সূত্রের খবর, আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্বভারতীর সমাবর্তন। সেদিন আচার্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভার্চুয়াল বক্তব্য রাখবেন। বিশ্বভারতীতে উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী এবং রাজ্যপালের। আলাপিনী মহিলা সমিতির তরফে মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা চাইছি ওইদিন আচার্য নিজে আমাদের সিল করে দেওয়া ঘরটি আবার খুলে দিন। আগেও এই বিষয়টি জানানো হয়েছে। আবারও চিঠি দিয়ে জানাব। আমাদের মাননীয় উপাচার্যের এখনও পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে কথা বলার সময় হল না। আচার্য যদি আমাদের মাত্র পাঁচ মিনিটও সময় দেন তাহলে আমরা আমাদের অবস্থাটা তাঁর কাছে তুলে ধরতে পারি।”
আলাপিনী মহিলা সমিতির সঙ্গে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সমস্যার সূত্রপাত গত বছরের ১০ ডিসেম্বর। সেদিন একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ মহিলা সমিতিকে নির্দেশ দেয় ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাঁদের অধিবেশন গৃহ ‘নতুন বাড়ি’ খালি করে দিতে হবে। ঠিক কী কারণে এই বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে তা নিয়ে ধন্দে পড়েন সদস্যরা। বিশ্বভারতীর বিভিন্ন কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন তাঁরা। এই টানাপোড়েনের ফলেই পৌষ উৎসব থেকেও বাদ পড়ে আলাপিনী মহিলা সমিতির অনুষ্ঠান। শেষ পর্যন্ত সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেন ৩১ ডিসেম্বর বাড়ি খালি করবেন না। ১ জানুয়ারি সকালে গিয়ে দেখেন ‘নতুন বাড়ি’ সিল করেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। ১৯১৬ সালে দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই সমিতির এমন অবমাননায় প্রতিবাদ শুরু করেন তাঁরা। সেই প্রতিবাদ এখনও একইভাবে চলছে।
ইতিমধ্যেই বিশ্বভারতীর তরফে একটি নতুন মহিলা সমিতি তৈরি করা হয়েছে। যাঁরা মাঘ উৎসবে অংশগ্রহণও করেছেন। ১০৪ বছরের পুরোনো আলাপিনী মহিলা সমিতিও তাদের ধারাবাহিক কর্মসূচি থেকে সরে আসেনি।
আসন্ন সমাবর্তনে কি এই টানাপড়েন শেষ হবে! তার জন্য আরও চার দিন।