
দ্য ওয়াল ব্যুরো, জলপাইগুড়ি: পান্তাভাতের সঙ্গে ইলিশ মাছের মুড়ো দিয়ে কচুর শাক আর শাপলার তরকারি। সকাল সকাল এই ভোগ খেয়ে বৈকন্ঠপুর রাজবাড়ি ছেড়ে কৈলাশে ফিরলেন উমা। তার আগে বৈকন্ঠপুর রাজবাড়ির প্রাচীন রীতি মেনে তামার পাত্রে মায়ের মুখ দেখলেন পরিবারের সদস্যরা। এরপর তোপ দেগে বিসর্জনের সূচনা হল জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়িতে।
৫১১ বছরের পুরোনো বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। প্রাচীন মতে বিভিন্ন রীতিনীতি মেনে পুজোর চারদিন ধরে মহাসমারোহে এখানে পূজিতা হন দেবী দুর্গা। দশমীতেও বিদায়বেলায় থাকে হরেক নিয়ম। রাজ পুরোহিত শিবু ঘোষাল জানালেন, বাপের বাড়ি ছেড়ে কৈলাশে স্বামীর ঘরে ফেরার সময় যত্নে যেন কোনও খামতি না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখেন রাজবাড়ির প্রতিটি সদস্য। পারিবারিক ঐতিহ্য মেনে দশমীতে দেবীকে দেওয়া হয় ইলিশ মাছের মুড়ো দিয়ে কচুর শাক। কচুর শাক-শাপলার তরকারির সঙ্গেই পোলাও-ভাজা-লুচি-পায়েসের ভোগ দেওয়া হয় দেবীকে।
করোনা পরিস্থিতিতে হরেক বিধিনিষেধ। তারই মধ্যে প্রতিবারের মতোই শূন্যে গুলি ছুঁড়ে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি। রাজবাড়ির প্রাঙ্গনে জমা হন পরিবারের সদস্যরা। ঢাকের বোলে ঘোষিত হয় বিদায়ের ক্ষণ।
নাটমন্দির থেকে যে পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন হয়, তার দূরত্ব মেরেকেটে ৫০ মিটার। কিন্তু প্রতিবার ভক্ত সমাগম সামলে এই দূরত্ব যেতেই লেগে যায় প্রায় দু’ঘণ্টা। এ বার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রথম থেকেই কড়া অবস্থান নিয়েছিলেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিসর্জনের শোভাযাত্রা শুরু হতেই হাজার দুয়েক মানুষের ভিড়ে শিকেয় উঠল সামাজিক দূরত্ব। বৈকুণ্ঠপুরের রাজবাড়ির বিসর্জনের শোভাযাত্রায় কালো মাথার ভিড়ে হারিয়ে গেল করোনা আতঙ্ক।
মঙ্গলবার একাদশীর দিন তিস্তাপারের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষ মাতবেন একদিনের দুর্গাপূজায়। ভান্ডানী রূপে পূজিতা হবেন দেবী দুর্গা। অন্তত একদিনের জন্য বিষাদ ভুলে আনন্দে মাতবেন ময়নাগুড়ি এবং ডুয়ার্সের মানুষ।