
দ্য ওয়াল ব্যুরো, জলপাইগুড়ি: চা বাগানের নিজস্ব লাইনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল এক পূর্ণবয়স্ক হস্তিনী। এরপরেই হলদিবাড়ি চা বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করল বন দফতর। বন দফতরের বিরুদ্ধে পালটা কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে চা ব্যবসায়ীদের সংগঠন।
চলতি বছরে উত্তরবঙ্গের তরাই ও ডুয়ার্সের জঙ্গল মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত মোট ১৬ টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে আটটি হাতি মারা গেছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে। একের পর এক হাতির মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে পরিবেশ কর্মীদের মধ্যে।
হলদিবাড়ি চা বাগান সংলগ্ন কোঁকড়াঝোড়া নদীর পাশে শুক্রবার সকালে একটি পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী হাতির মৃতদেহ দেখতে পান চা বাগানের কর্মীরা। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা খবর দেন বিন্নাগুড়ি ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়াডে। টিম নিয়ে ছুটে যান বিন্নাগুড়ি ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়াডের রেঞ্জার শুভাশিস রায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন গরুমারা ওয়াইল্ড লাইফ ডিভিশনের ডিএফও নিশা গোস্বামী এবং অনারারি ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন সীমা চৌধুরী।
বন দফতরের কর্তারা জানান, ঘটনাস্থলে হাতির মৃতদেহের পাশে একটি ১১০০০ ভোল্টের ইলেকট্রিকের তার পড়ে থাকতে দেখেন তাঁরা। পাশেই চা বাগানে জলসেচের কাজ হচ্ছিল। তাঁদের প্রাথমিক অনুমান সেখানেই হাতিটি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে। অনারারি ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন সীমা চৌধুরী বলেন, ‘‘হাতির গায়ের সঙ্গে বিদ্যুৎয়ের তার জড়িয়ে ছিল। পাশেই হলদিবাড়ি চা বাগানের সেচের কাজ চলছে। তাই তারটি যে ঝুলে আছে সেই কথা চা বাগান কর্তৃপক্ষের নিশ্চয়ই অজানা ছিল না।’’
গরুমারা ওয়াইল্ড লাইফ ডিভিশনের ডিএফও নিশা গোস্বামী বলেন, ‘‘আমরা ইতিমধ্যে মামলা দায়ের করেছি। এর আগেও কয়েকটি এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। আমরা বিদ্যুৎ দফতর সহ অন্যান্য দফতরের সাথে বসে কিছু কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। হাতির দেহের ময়নাতদন্ত হবে। তারপর মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা সম্ভব হবে।’’
এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন বানারহাট বিদ্যুৎ বন্টন দফতরের স্টেশন ম্যানেজার শুভম দুপ্পা। তিনি বলেন ‘‘আগে অনেক জায়গায় তার ঝুলে ছিল। যার একটা বড় অংশ আমরা মেরামত করে ফেলেছি। কিন্তু এটা চা বাগানের নিজস্ব লাইন। তাই আমরা এর দেখভাল করি না। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলাম। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট দেব।’’
চা বনিকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের ডুয়ার্স ব্রাঞ্চের সচিব সঞ্জয় বাগচি দাবি করেন এই ঘটনার জন্য চা বাগান কর্তৃপক্ষ কোনওভাবে দায়ী নয়। কারণ যে সমস্ত চা বাগানের নিজস্ব লাইন আছে তারা তা রক্ষণাবেক্ষণ করেন। এ দিন হাতিটি একটি বিদ্যুতের খুঁটি ভাঙে। তার ফলেই এই ঘটনা। পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন, রেড ব্যাঙ্ক চা বাগান বন্ধ রয়েছে। সেখানে ঝোপজঙ্গলে ভরে গেছে। নতুন করে হাতির আস্তানা তৈরি হয়েছে। বন দফতরকে বারবার জানানো স্বত্বেও কিছুই করছে না।