
দ্য ওয়াল ব্যুরো, ঝাড়গ্রাম: চিন বিপ্লবের অবিসংবাদী নেতা মাও সে তুং তাঁর রেড বুকের এক জায়গায় লিখেছিলেন, “জয় বা পরাজয়ের জন্য ভাগ্যকে দায়ী কোরো না। আত্মবিশ্লেষণ করো। এগিয়ে চলো।”
কিন্তু ভাগ্যের কী খেলা! লটারির টিকিট কেটে কোটিপতি হয়ে গেলেন জঙ্গলমহলের প্রাক্তন মাওবাদী নেতা তথা বর্তমানে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল হোমগার্ড যজ্ঞেশ্বর বেসরা। এক কোটি টাকা লটারি পেয়ে আপাতত নিজেদের মাটির বাড়িটা পাকা করার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
যজ্ঞেশ্বর বেসরার বাড়ি গোপীবল্লভপুর থানার অন্তর্গত কেন্দুগাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের রেহেড়াঘুটু গ্রামে। বাম আমলে গ্রামের আরও অনেকের মতো তিনিও জড়িয়ে পড়েছিলেন মাওবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে। ওড়িশা সীমান্ত এলাকায় তাঁর বাড়ি হওয়ায় তাঁর নামে ওড়িশা রাজ্যের শুলিয়াপাদা থানায় মাওবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকায় তিনটি মামলা রুজু হয়েছিল। রাজ্য সরকারের বিশেষ প্যাকেজে ২০১৪ সালে স্পেশাল হোমগার্ডের চাকরি পান যজ্ঞেশ্বর। এখন তিনি বিবাহিত। তাঁর একটি মেয়ে রয়েছে। বাবা, মা এবং দাদাদের সঙ্গেই যৌথ পরিবারে বাস।
আপাদমস্তক সংসারী হয়ে আরও ভাল থাকার ভাবনায় মাঝেমধ্যেই লটারির টিকিট কেনেন তিনি। আগেও জিতেছেন ৪৫ হাজার টাকা। এবার একেবারে এক কোটি। প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেননি। পরে ধাতস্থ হয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন নিজেদের কাঁচা ঘরটাকে পাকা করার।
বৃহস্পতিবার সকালে দেড়শো টাকা দিয়ে ৩০ টাকা দামের একই সিরিজের পাঁচটি টিকিট কেটেছিলেন ঝাড়গ্রাম থানায় কর্তব্যরত স্পেশাল হোমগার্ড যজ্ঞেশ্বর ও তাঁর সহকর্মী ভবেশ মান্ডি। আর পাঁচটা দিনের মতোই থানায় কাজ সেরে নিজের ব্যারাকে ফিরে যান। দুপুরের পর ডিউটি না থাকায় এক বন্ধুর সঙ্গে জঙ্গলমহল উৎসব দেখতে গিয়ে জামদা এলাকার একটি লটারির দোকানে সেদিন সকালের ডিয়ার লটারির ফলাফল দেখেন। এক কোটি টাকার পুরষ্কার জিতেছেন জানতে পেরে হতভম্ভ হয়ে যান।
এরপর কাউকে কিছু না বলে বন্ধুর সঙ্গে ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশ ব্যারাকে ফিরে নিজের রুমে চলে যান তিনি। এর মধ্যেই ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশ ব্যারাকে চাউর হয়ে যায় এক কোটি টাকার লটারি পেয়েছেন যজ্ঞেশ্বর।
এদিন ঝাড়গ্রাম থানার চত্বরে দাঁড়িয়ে যগেশ্বর বেসরা বলেন, ‘‘আমি আগেও একবার ৪৫ হাজার টাকা লটারিতে পেয়েছিলাম। কিন্তু এই প্রথম এক কোটি টাকা পেলাম। আমার খুব ভালো লাগছে। আমার স্বপ্ন বেশি কিছু নেই। শুধু আমার মাটির বাড়িটি পাকা করতে চাই । কিছু চাষের জমি কিনতে চাই।’’