
স্কুলে যায় না কেউ, নেই জীবিকাও, পুরুলিয়ায় ডুংরির ফাঁকে জীবন কাটে ১৫ পরিবারের
যে ঘরে মানুষগুলো বসবাস করেন তা দেখলে চোখ কপালে উঠবে। ঘরে কোনও দরজা-জানলা নেই। মাথার ছাদ হিসাবে থাকা প্লাস্টিক ফেটে গিয়ে দিনের আলো যেমন ঢোকে, রাতে তেমনি ঢোকে ঠান্ডা বাতাস । হামাগুড়ি দিয়ে সেই ঘরে ঢুকতে হয়। প্রতিদিনের পাতে কেবল শুকনো ভাত।
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পুরুলিয়া: ছোট ছোট পাথরের টিলা ঘেরা আরশা থানার হেরোডি গ্রাম। এই টিলা বা ডুংরিগুলির ফাঁকে ১৫টি পরিবারের বাস। সদস্যসংখ্যা নয় নয় করেও আশিজন। তিনপুরুষে স্কুলমুখী হননি কেউ। নিশ্চিত জীবিকা নেই কারও। আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড এ সব আছে বলে শুনেছেন। কিন্তু চোখে দেখেননি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দারিদ্র আর অশিক্ষাকে সঙ্গী করে ডুংরির ফাঁকে ফাঁকে প্লাস্টিকের তাঁবু খাটিয়ে বেঁচে রয়েছেন তাঁরা।
মালাকার সম্প্রদায়ের এই মানুষগুলির এক সময়ের জীবিকা ছিল অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে সের মাপার কৌটো তৈরি করা। এর চাহিদা কমতেই বেঁচে থাকার রসদেও টান পড়েছে এই সমস্ত মানুষগুলোর। পেট চালাতে এখন দিনমজুরি করেন তাঁরা। নির্দিষ্ট কোনও কাজ নেই। যখন যা পান সেই কাজ করে সংসার চলে। আদি নিবাস কোথায় তাও ভুলে গেছে এই মানুষগুলো। জীবন সম্পর্কে বরাবরের উদাসীন মানুষগুলো এখন অবশ্য একটু স্থিরতা চাইছেন। এঁদেরই একজন লঙ্কেশ্বর মালাকার বললেন, ‘‘সবসময় কাজ থাকে না। তাই কীভাবে চলবে পরিবারের সবার পেট তাই নিয়ে চিন্তায় পড়ে যাই। শুধু সেটুকু নিশ্চিত হলেই আমরা বর্তে যাই।’’
যে ঘরে মানুষগুলো বসবাস করেন তা দেখলে চোখ কপালে উঠবে। ঘরে কোনও দরজা-জানলা নেই। মাথার ছাদ হিসাবে থাকা প্লাস্টিক ফেটে গিয়ে দিনের আলো যেমন ঢোকে, রাতে তেমনি ঢোকে ঠান্ডা বাতাস । হামাগুড়ি দিয়ে সেই ঘরে ঢুকতে হয়। প্রতিদিনের পাতে কেবল শুকনো ভাত। সঙ্গে তরকারি যেদিন জোটে, ভাবতে হবে দিনটা একেবারেই অন্যরকম। আহার ও বাসস্থানের দৈন্য ফুটে ওঠে তাদের পোশাকেও।
লতিকা মালাকার, ছাতা মালাকাররা জানান, এখন স্থানীয় ইটভাটায় কাজ করেন তাঁরা। যা মজুরি পান তাই দিয়ে কোনওরকম ভরে পেট। বাচ্চাদের কাউকে স্কুলে পাঠান না। আসলে তাঁরা যে এই দেশের নাগরিক তারই তো কোনও প্রমাণ নেই। শুধুমাত্র পেটে খেয়ে বেঁচে থাকাটাই যে তাঁদের কাছে মস্ত চ্যালেঞ্জ।
ওঁদের কথা জানতে পেরে জেলাশাসক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই ১৫টি পরিবার যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে তারজন্য সবরকম সাহায্য করব। সরকারি নানা প্রকল্পের আওতায় এলেই এঁদের জীবন পুরোপুরি বদলে যাবে।’’