
দ্য ওয়াল ব্যুরো, জলপাইগুড়ি: বন্যপ্রাণী উদ্ধারে নজির গড়ল গরুমারা ওয়াইল্ড লাইফ ডিভিশন। খাঁচায় ঢুকে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে চিতাবাঘকে কাবু করলেন বনকর্মীরা। রাস্তার ধারে পাইপের ভেতর ঢুকে তাকে সযত্নে জালে মুড়িয়ে বাইরে আনলেন মহিলা বনাধিকারিক। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা পরিবেশ কর্মীরা এমন উদ্ধারকাজ দেখে উচ্ছ্বসিত।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মাল মহকুমার শোনগাছি চা বাগানের কাছে রাস্তা পার হচ্ছিল একটি পূর্ণ বয়স্ক স্ত্রী চিতাবাঘ। সেই সময় একটি দ্রুত গতির গাড়ি তাকে ধাক্কা মারলে সে পায়ে চোট পায়। এরপর যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকে। চিতাবাঘের এই অবস্থা দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা খবর দেন মাল ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়াডে। খবর পেয়ে ছুটে আসেন বনকর্মীরা। আসেন পরিবেশ কর্মীরাও। কিন্তু ততক্ষণে চিতাবাঘ আশ্রয় নিয়েছে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা একটি পাইপের ভিতর।
বনকর্মীরা ওই পাইপের দু’দিকে খাঁচা পেতে বাজি ফাটিয়ে, ধোঁয়া দিয়ে তাকে বের করার চেষ্টা করে। কিন্তু কোনওভাবেই বাইরে আনা যায়নি তাকে। পরিস্থিতি দেখে এরপর গরুমারা ওয়াইল্ড লাইফ ডিভিশনের আধিকারিকেরা সিদ্ধান্ত নেন তাকে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে কাবু করে উদ্ধার করা হবে। সেই মোতাবেক জলপাইগুড়ি থেকে ট্রাঙ্কুলাইজ টিম নিয়ে রওনা হন এডিএফও রিয়া গাঙ্গুলি।
সেখানে পৌঁছে পাইপের একদিকে থাকা খাঁচার ভেতর ট্রাঙ্কুইলাইজার গান নিয়ে ঢুকে পড়েন বনকর্মী সৌভিক মণ্ডল। এরপর ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে চিতাবাঘটিকে কাবু করেন তিনি। এরপর ঘটে ছন্দপতন। কে ওই স্বল্প পরিসর পাইপের ভেতর ঢুকে চিতাবাঘটিকে বের করবে তা নিয়ে শুরু হয় জল্পনা।
এগিয়ে আসেন বনাধিকারিক রিয়া গাঙ্গুলি। তিনি জাল নিয়ে কষ্ট করে পাইপের ভেতর ঢুকে যান। এরপর চিতাবাঘটিকে জাল দিয়ে জড়িয়ে টেনে বাইরে বের করে আনেন। খাঁচাবন্দি করে গরুমারা প্রকৃতিবিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হয় চিতাবাঘটির।
পরিবেশপ্রেমীদের সংগঠন স্পোরের সম্পাদক শ্যামাপ্রসাদ পান্ডে বলেন, ‘‘দু’দিন আগেই শিলিগুড়ির কাছে একটি চিতাবাঘ উদ্ধার করতে গিয়ে এক বনাধিকারিক আক্রান্ত হলে চিতাবাঘটিকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু শুক্রবার রাতে শোনগাছি চা বাগানে চিতাবাঘ উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থলে আমি নিজে উপস্থিত থেকে দেখলাম অসাধারণ ম্যানেজমেন্ট দিলেন আমাদের বনাধিকারিক রিয়া গাঙ্গুলি ও তাঁর টিম। তিনি যদি ঝুঁকি নিয়ে তখন পাইপের ভেতর না ঢুকতেন তবে চিতাবাঘটিকে বের করে এনে চিকিৎসা শুরু করা যেত না।’’
চিতাবাঘটির চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর বন আধিকারিক রিয়া বলেন, ‘‘এটা আমাদের কাজের একটা পার্ট। আমাদের পুরো টিম যেভাবে খেটেছে তা দেখার পর আমি কী হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি।’’
গরুমারার ডিএফও নিশা গোস্বামী বলেন, শুক্রবার রাতে নিজের জীবন বিপন্ন করে এগিয়ে যান রিয়া ও আমাদের কর্মীরা। ফলে চিতাবাঘটিকে সময় মতো উদ্ধার করে তার চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়েছে। চিতাবাঘটি এখন চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছে। তার কোমড়ে চোট আছে। সম্পূর্ণ সুস্থ হলে তাকে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে।’’