
মমতার ঘোষণা করা ছৌ অ্যাকাডেমির জমিতে চরে বেড়ায় গরু, হতাশ বান্দোয়ানের শিল্পীরা
বান্দোয়ান শহরে ঢোকার মুখে এই ছৌ অ্যাকাডেমি তৈরির জন্য জায়গাও নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা হয়েছিল এই অ্যাকাডেমি। কিন্তু তারপর আর কাজ এগোয়নি। গত কয়েক বছর ধরে সেই অ্যাকাডেমির ঘেরা জায়গাতে গজিয়েছে ঘাস। যেখানে থাকার কথা ছিল ছৌ শিল্পীদের, সেখানে এখন গৃহপালিত জন্তুদের নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র।
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পুরুলিয়া: ছৌ সংস্কৃতি দিয়ে আলাদাভাবে চেনা যায় পুরুলিয়া জেলাকে। বছর ছয়েক আগে বান্দোয়ানে প্রশাসনিক সভা করতে এসে পুরুলিয়ায় একটি ছৌ অ্যাকাডেমি তৈরি করা হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বান্দোয়ান শহরে ঢোকার মুখে এই ছৌ অ্যাকাডেমি তৈরির জন্য জায়গাও নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা হয়েছিল এই অ্যাকাডেমি। কিন্তু তারপর আর কাজ এগোয়নি। গত কয়েক বছর ধরে সেই অ্যাকাডেমির ঘেরা জায়গাতে গজিয়েছে ঘাস। যেখানে থাকার কথা ছিল ছৌ শিল্পীদের, সেখানে এখন গৃহপালিত জন্তুদের নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র। আদৌ সেই অ্যাকাডেমি হবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান এলাকার ছৌ শিল্পীরা।
পুরুলিয়া মানে ঝুমুর,ছৌ,নাটুয়া। জেলার প্রান্তিক মানুষগুলোর রক্তে রয়েছে এই বীররসের নাচ। পুরুলিয়াকে বিশ্বে সমাদৃত করেছে ছৌ নাচ। সারা জেলাজুড়ে এক হাজারেরও বেশি ছোট-বড় ছৌ নাচের দল রয়েছে। ২০১৫ সালের ২ ডিসেম্বর বান্দোয়ানের ডবলাডি মাঠে প্রশাসনিক জনসভা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি ঘোষণা করেছিলেন, বান্দোয়ানে গড়ে উঠবে ছৌ অ্যাকাডেমি। মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেছিলেন কোন খাতে অ্যাক্যাডেমির টাকা দেওয়া হবে।
তারপরেই বান্দোয়ান শহরে ঢোকার মুখেই রাস্তার পাশেই জমি নির্ধারণ করা হয়েছিল। সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল সে জমি। তারপর আর এক বিন্দু কাজ এগোয়নি। একাডেমির ঘেরা জায়গায় এখন বাঁধা থাকে গরু-ছাগল। সকলেই জানেন যে সেখানে একাডেমি হওয়ার কথা ছিল। এখন আদৌ সেখানে অ্যাকাডেমি হবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান সকলে।
অ্যাকাডেমির ভাবনায় বান্দোয়ানের ছৌশিল্পীরাও আশায় বুক বেঁধেছিলেন। শম্ভু কর্মকার, সুধাকর মাঝিরা বলেন, ‘‘ভেবেছিলেন একটা নির্দিষ্ট ছাতার তলায় আসলে নতুন প্রজন্মকে আরও ভাল করে নাচ শেখাতে পারব। কারণ এই নাচের ভিতর কী বার্তা আছে অনেকের কাছেই তা অজানা। এই প্রজন্মের কাছে এই ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য এমন একটা অ্যাকাডেমির খুব দরকার ছিল।’’
কিন্তু ছয় বছরেও তৈরি করা যায়নি এই অ্যাকাডেমি। কখন কীভাবে এই অ্যাকাডেমি তৈরি হবে তা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে কোনও স্পষ্ট দিশা নেই। যা পাওয়া গেছে সেটা শুধু গতানুগতিক প্রতিশ্রুতি। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে পুরুলিয়ার জেলাশাসক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ব্লকের বিডিওর কাছ থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
তাই হতাশ হয়ে পড়ছেন শিল্পীরা। তাঁরা বলছেন একেই এই প্রজন্ম ঐতিহ্যের ছৌ নাচের প্রতি আর তেমন টান অনুভব করেন না। তারউপর রয়েছে আরও হরেক বাধা। এমন একটা অ্যাকাডেমি হলে এগোনো যেত কিছুটা। তাও পড়ে রইল বিশ বাঁও জলে।