
দ্য ওয়াল ব্যুরো, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: বাড়িতে ফেরা অথৈ জলে মূক ও বধির তরুণীর। তবু হাল ছাড়তে নারাজ হ্যাম রেডিও।
মাস দেড়েক আগে রাজপথ থেকে এক তরুণীকে উদ্ধার করে পুলিশ। হ্যাম রেডিওর সৌজন্যে তাঁর আত্মীয় স্বজনদের ঠিকানা উদ্ধার হয়। কিন্তু তাঁকে তাঁর আত্মীয়রা কেউ ফিরিয়ে নিতে চাইছেন না বলে অভিযোগ। তবে হাল ছাড়তে নারাজ হ্যাম রেডিও। তাঁরা মহিলাকে বাড়িতে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে আবেদন জানিয়েছে।
মাস তিনেক আগে এয়ারপোর্ট থানার বিরাটি এলাকায় এক তরুণীকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন স্থানীয় মানুষজন। তাঁরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ মহিলাকে থানায় নিয়ে যায়। বারাসত কোর্ট এই মহিলাকে কোনও সরকারী অনুমোদন প্রাপ্ত হোমে রাখার নির্দেশ দেয়। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী রাজারহাট কলাবেড়িয়া নবোদয় সদর গৃহ নামে একটি হোমে পাঠানো হয় তাঁকে। পাশাপাশি হোম কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আসে মহিলা সম্পর্কে কোন সুলুকসন্ধান পেলে তা যেন পুলিশ কে জানানো হয়। ইতিমধ্যে বেশ কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর হোম কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারেন ওই তরুণী অন্তঃসত্ত্বা।
এরপরেই পুলিশ আত্মীয়দের ঠিকানা খুঁজে পাওয়ার জন্য হ্যাম রেডিওর দ্বারস্থ হয়। হ্যাম রেডিও প্রথমেই এই তরুণীর বাবাকে সনাক্ত করেন। তিনি ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর কাজ করতেন। ১৫ বছর আগে তিনি নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর তাঁর স্ত্রী চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন। এই মহিলাই তার দুই মেয়েকে অন্য কারোর সাহায্যে বিহারে বিয়ে দিয়ে আসেন বলে অভিযোগ। হ্যাম রেডিয়োর সদস্যরা ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সুপার ওই তরুণীকে সনাক্ত করেন।
এরপর উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরে এই তরুণীর স্বামীরও হদিশ পায়। স্ত্রীর ছবি দেখে চিনতে পারে স্বামী। লকডাউন চলার সময় তাঁর স্ত্রী বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় বলে স্থানীয় থানায় ২২ জুন একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি। লকডাউনের সময় সুদূর উত্তরপ্রদেশ থেকে বিরাটিতে এই মহিলা কী ভাবে এলেন তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ। কিন্তু এত সবের পরেও কিন্তু স্ত্রীকে বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য কোনও উদ্যোগ নেননি তাঁর স্বামী।
পুলিশ জানতে পারে ভিন জাতের মেয়েকে বিয়ে করায় বাড়িতে প্রতিদিন অশান্তি হত। তাই ওই তরুনীকে বিক্রি করে দিয়েছিল সে। চারদিন আগে ওই তরুনীর প্রসব যন্ত্রনা শুরু হয়। রাজারহাট হোম কর্তৃপক্ষ তাঁকে কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে সোমবার রাতে এক শিশুকন্যার জন্ম দেয় সে। যদিও কয়েক ঘন্টার মধ্যে সেই শিশুকন্যার মৃত্যু হয়। হোম কর্তপক্ষ সমস্ত ঘটনার কথা লিখিত ভাবে জেলা ওয়েলফেয়ার আধিকারিক ও পুলিশ কে জানিয়েছেন।
হ্যাম রেডিয়োর পশ্চিমবঙ্গ ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন “দীর্ঘ প্রায় দুমাস ধরে মহিলা সম্পর্কে খোঁজখবর করে তাঁর মা, বাবা, স্বামী, বোনকে খুঁজে বের করেছি। কিন্তু কেউ তাঁকে ফেরত নিতে চাইছেন না। অন্য জাতের মেয়ে বলে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের আবেদন প্রশাসন তাঁকে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করুক।”