
দ্য ওয়াল ব্যুরো, জলপাইগুড়ি: হু হু করে হাই ভাইরাল লোড করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ায় পুজোর মুখে উদ্বেগ বাড়ছে জলপাইগুড়িতে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের খবর, সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে এই ধরনের রোগীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ পেরিয়ে গেছে। উপসর্গহীন করোনা রোগীর মধ্যে হাই ভাইরাল লোড করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চিকিৎসক মহল।
রাজ্যের মধ্যে একমাত্র জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতর করোনা মোকাবিলা নিয়ে গবেষণামূলক সমীক্ষার কাজ করছে। সিটি ভ্যালু পদ্ধতিতে মানবদেহ থেকে লালারসের নমুনা সংগ্রহের পর এই মেশিনের মাধ্যমে একজন মানুষের দেহে কত পরিমাণ ভাইরাস লোড আছে তা দেখা হয়। এবং সেই পরিমাণ ভাইরাসের উপস্থিতি ওই মানুষের দেহের পক্ষে কতটা বিপদজনক তা নির্ণয় করে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়ার কাজ শুরু করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
শেষ পর্যায়ের লকডাউন এবং তার পরবর্তীকালে আনলক শুরু হওয়ার পর গত দেড়মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই সমীক্ষায় উঠে এসেছে মারাত্মক তথ্য। এই তথ্য অনুযায়ী উত্তরবঙ্গে উপসর্গহীন করোনা পজিটিভ রোগীরাই স্বাস্থ্য দফতরের সবচেয়ে বেশি মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত দেড়মাসে জলপাইগুড়ি জেলায় হাই ভাইরাল লোড করোনা পজিটিভ রোগীদের রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায় ২৩ অগস্ট থেকে ৩০ অগস্ট পর্যন্ত এই হার ছিল ২২.৮৪ শতাংশ। ৩১ অগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়ায় ২১.০৫ শতাংশে। ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই হার ছিল ২১.০৮ শতাংশ। ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী এক সপ্তাহে একলাফে যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬.৫৩ শতাংশতে। ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে পয়লা অক্টোবর- এই সপ্তাহে এই হার আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০.৬৮ শতাংশতে। আশঙ্কা করা হচ্ছে চলতি সপ্তাহে এই হার আরও বৃদ্ধি পাবে।

এই তথ্য দিয়ে অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি ডাক্তার সুশান্ত রায় বলেন, ‘‘রাজ্যের মধ্যে একমাত্র জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতর যারা সি টি ভ্যালু নিয়ে কাজ করছে। সামনেই শারদীয়া উৎসব। মানুষ এখন সব বাঁধন খুলে দিয়ে বাজারে ছুটছে পুজোর জন্য জামাকাপড় সহ অন্যান্য জিনিস কিনতে। যদি মানুষ সচেতন না হন তবে আগামী বছর জামাকাপড় কেনার জন্য লোক কমে যাবে। কারণ কোভিড নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়ে প্রচুর লোক মারা যাবে। ফলে জনসংখ্যা ব্যাপক হারে কমে যেতে পারে।’’
তিনি জানান, যে সমস্ত করোনা রোগীর মধ্যে হাই ভাইরাল লোড থাকে তাঁদের মধ্যে কমিউনিটিতে সবচেয়ে বেশি করোনা রোগ ছড়ানোর ক্ষমতা থাকে। তিনি বলেন, ‘‘যাঁদের পরীক্ষার পর করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসছে তাঁদের আমরা আইসোলেশন করে দিতে পারছি। কিন্তু যারা করোনা পরীক্ষা না করিয়ে হাটে বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ হাই ভাইরাল লোড রোগী হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এরাই কমিউনিটিতে বেশি করে এই রোগ ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তাই অবিলম্বে এঁদের চিহ্নিত করার লক্ষে টেস্ট করানোর প্রয়োজন। কিন্তু একটা বড় অংশর মানুষের মধ্যে টেস্ট করানো নিয়ে অনীহা রয়েছে। যার ফল পূজোর পর মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। হয়তো সরকারী হাসপাতালে আর জায়গা দেওয়া যাবে না। তখন মানুষকে এই চিকিৎসা নিতে প্রাইভেট হাসপাতালে যেতে হবে। যার জন্য তখন একজন মানুষকে এই একই চিকিৎসার জন্য সাত থেকে পনেরো লক্ষ টাকা নিজের পকেট থেকে গুনতে হবে। তাই করজোড়ে আবেদন করছি পুজোর বাজারে ভিড় বাড়াবেন না। পূজোতে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে মাস্ক পরে নিজের পাড়ায় থাকুন। একবছর নয় না দেখলেন না বিভিন্ন পাড়ার ঠাকুর।’’