
৮২ বছরের পরম্পরা, বর্ধমানের মানুষকে মিষ্টি খাইয়ে নেতাজির জন্মদিন পালন হল তাঁর অনুরাগীর দোকানে
এরাজ্যে তো বটেই, গোটা দেশেই নেতাজির নামে রয়েছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বর্ধমানের এই দোকানের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নেতাজির স্মৃতি, স্বদেশী আবেগের উত্তরাধিকার। প্রতিবছরই দিনটা ধূমধাম করে পালন করেন দোকানের মালিক। এবার কোভিড পরিস্থিতিতে ছবিটা একটু ভিন্ন। আড়ম্বরে ভাঁটা পড়লেও ঐতিহ্যে চিড় ধরাতে পারেনি। সকাল থেকে শুরু হয় সমস্ত পথচারীদের মিষ্টি বিতরণ।
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজ ১২৫ তম জন্মদিন। দেশনায়কের সম্মানে গোটা দেশ আনত। প্রায় বিরাশি বছরের পরম্পরাকে সামনে রেখে বর্ধমানের বি সি রোডের নেতাজি মিষ্টান্ন ভাণ্ডারেও পালিত হল নেতাজির জন্মদিন।
এরাজ্যে তো বটেই, গোটা দেশেই নেতাজির নামে রয়েছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বর্ধমানের এই দোকানের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নেতাজির স্মৃতি, স্বদেশী আবেগের উত্তরাধিকার। প্রতিবছরই দিনটা ধূমধাম করে পালন করেন দোকানের মালিক। এবার কোভিড পরিস্থিতিতে ছবিটা একটু ভিন্ন। আড়ম্বরে ভাঁটা পড়লেও ঐতিহ্যে চিড় ধরাতে পারেনি। সকাল থেকে শুরু হয় সমস্ত পথচারীদের মিষ্টি বিতরণ।
দোকানের বর্তমান কর্ণধার সৌমেন দাস জানান, তাঁর মাতামহ গোবিন্দচন্দ্র নাগ এই দোকানের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন নেতাজির অনুগামী। কলকাতার মেয়র থাকাকালীন একবার বর্ধমানে এসেছিলেন তিনি। বর্ধমান পুরসভার একটি ভবন আর ব্যাংক উদ্বোধনের কর্মসূচি ছিল তাঁর। সে সময় তরুণ সুভাষচন্দ্রের প্রভাব গোটা বাংলাজুড়ে। সেদিন বর্ধমান শহরের বি সি রোডে একটি পদযাত্রা করেন নেতাজি। সেই পদযাত্রায় অন্য অনেকের সঙ্গে ছিলেন তরুণ গোবিন্দচন্দ্র নাগ। ছিলেন ডাঃ শৈলেন মুখার্জি, ডাঃ সুবোধ মুখার্জি, বামাপতি ভট্টাচার্য- সহ সমাজের অন্যান্য স্বদেশী অনুরাগীরা।
সেসময় স্বদেশী ভাবনায় জারিত হচ্ছে ব্যবসা ক্ষেত্র। বিদেশি সরকারের গোলামি না করে নিজে কিছু করার মধ্যে যে এক অন্য আবেগ! নেতাজীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্বয়ং নেতাজীর নামে এই দোকান খুলেছিলেন গোবিন্দচন্দ্র। কালেকালে দোকান অনেক বড় হয়েছে। আরও শাখাও খোলা হয়েছে। কিন্তু এতবছর পরে এখনও গোবিন্দচন্দ্রের দৌহিত্র এই দোকানের ঐতিহ্য বজায় রেখে চলেছেন। তিনি বলেন,‘‘আগে নেতাজির জন্মদিন অনেক বড় করে হত। নহবত বসত। বড় প্যান্ডেল হত। সারদিন অনুষ্ঠান চলত। হত মিষ্টি বিতরণ। এখনও তা বজায় রাখার চেষ্টা চলছে। যদিও এবার করোনা পরিস্থিতিতে সবকিছুই হচ্ছে অনেক ছোট আকারে।’’
ইতিহাসবিদ সর্বজিৎ যশ বলেন, ‘‘আরও কয়েকবার নেতাজি নানা কর্মসূচিতে এই রাজার শহরে এসেছেন। কিন্তু এই দোকানের কাহিনীতে শহরের স্বদেশিয়ানা মনোভাব জড়িয়ে আছে।’’
আজ নেতাজির জন্মদিনে ক্রেতাদের জন্য স্পেশাল আকর্ষণ ক্যাডবেরি সন্দেশ, জেলি সন্দেশ, মালাইপুরি সহ আরও নানা মিষ্টি। আর বিনামূল্যে রয়েছে লাড্ডু বিলি। গোটা বর্ধমান এই দোকানে গল্প শোনে আজ। শোনে নেতাজি ও তার এক স্বদেশী ভক্তের স্বনির্ভরতার কাহিনী।