
দায়ের কোপে ঝাঁপিয়ে পড়া চিতাবাঘকে ঘায়েল করে প্রাণে বাঁচলেন চা বাগানের লীলা
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ ভাতখাওয়া চাবাগানের ১৫ নম্বর সেকশনে ঝুরনির কাজ করছিলেন ৪৫ ছুঁইছুঁই লীলা। ধারালো বিশেষ ধরনের লোহার পাতলা দা দিয়ে চা গাছের ডালপালা ছেটে দেওয়াকেই বলে ঝুরনি। সেই কাজ করার সময় আচমকাই পেছন থেকে লীলার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে একটি স্ত্রী চিতাবাঘ। ভয় পেলেও হাল ছাড়েননি লীলা।
দ্য ওয়াল ব্যুরো, আলিপুরদুয়ার: হাড়হিম করা লড়াইয়ে হিংস্র লেপার্ডকে হারিয়ে প্রাণে বেঁচে ফিরলেন ভাতখাওয়া চাবাগানের শ্রমিক লীলা ওঁরাও। বাগানে তকমা পেলেন বাঘিনীর।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ ভাতখাওয়া চাবাগানের ১৫ নম্বর সেকশনে ঝুরনির কাজ করছিলেন ৪৫ ছুঁইছুঁই লীলা। ধারালো বিশেষ ধরনের লোহার পাতলা দা দিয়ে চা গাছের ডালপালা ছেটে দেওয়াকেই বলে ঝুরনি। সেই কাজ করার সময় আচমকাই পেছন থেকে লীলার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে একটি স্ত্রী চিতাবাঘ। ভয় পেলেও হাল ছাড়েননি লীলা।
চিতাবাঘটি তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়তেই পাল্টা আক্রমণ শানান লীলা। হাতে থাকা দা দিয়ে চিতাকে এলোপাথারি মারতে থাকেন লীলা। বেগতিক বুঝে লীলাকে ছেড়ে দিয়ে প্রাণ ভয়ে ছুটে পালায় চিতাবাঘটি। প্রাণে বেঁচে যান লীলা। জখম এই চা শ্রমিককে সঙ্গে সঙ্গে কালচিনির লতাবাড়ি গ্রামীন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে তাঁর আঘাত গুরুতর নয় বলেই জানিয়েছেন ডাক্তাররা। পরে লতাবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে তাঁকে চা বাগানের হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
হাসপাতালের শয্যায় বসে লীলা ওঁরাও বলেন, ‘‘ওই এলাকার আশেপাশে কয়েকদিন আগেই একটি লেপার্ডকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছেন স্থানীয়রা। যখন সেটি আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তখন আমার পাল্টা আক্রমণ করা ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিলনা। দায়ের আঘাতেই ও পালিয়েছে।’’
লীলার লড়াইকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন সকলেই। এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য কমল ওঁরাও বলেন, ‘‘ওই এলাকায় কয়েকদিন বয়সের একটি শাবক-সহ একটি লেপার্ডকে দেখা যাচ্ছিল। সাধারণত পুরুষ লেপার্ডের হাত থেকে নিজের শাবকদের বাঁচাতে চা বাগানের নালায় শাবক নিয়ে আশ্রয় নেয় মা লেপার্ড। না হলে পুরুষ লেপার্ড তার সন্তানদের খেয়ে ফেলে। শাবক সহ মা লেপার্ড ভয়ংকর হিংস্র হয়। এই লেপার্ডকে পরাজিত করা সোজা কথা নয়। এই লড়াইতে জিতে লীলা এখন আমাদের চা বাগানের বাঘিনী হয়ে উঠেছে। ও সুস্থ আছে।’’
কাছেই বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের নিমতি রেঞ্জের জঙ্গল। সেখান থেকে শাবক নিয়ে ভাতখাওয়া চা বাগানের নালায় আশ্রয় নিয়েছে ওই স্ত্রী লেপার্ডটি। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের পশ্চিম বিভাগের উপক্ষেত্র অধিকর্তা উমর ইমাম বলেন, ‘‘কাছেই বনাঞ্চল। তাই চা বাগানে লেপার্ড ঢুকতেই পারে। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। জখম মহিলা সুস্থ আছেন। এলাকায় বনকর্মীরা টহল দিচ্ছেন। কোনও ভাবেই বন্য জন্তুকে আঘাত করা বেআইনি। আমরা ঘটনা খতিয়ে দেখছি।’’