
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাতারাতি শুভেন্দু অধিকারীর ছবি দিয়ে অনুগামীদের হোর্ডিং পড়ল আবার। এবার দক্ষিণবঙ্গ। জানা গেছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ, ক্যানিং পূর্ব, গড়িয়া, ঘুঁটিয়ারি শরিফ, সোনারপুর, বারুইপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় আজ শনিবার সকালে দেখা গেছে শুভেন্দুর পোস্টারে ছয়লাপ। যথারীতি, কে বা কারা রাতারাতি এত পোস্টার দিলেন, তা অজানা। এই পোস্টারের অর্থ এটাই, যে শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীরা সর্বত্র সক্রিয়।
২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘন্ট এখনও ঘোষনা হয়নি। কিন্তু ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ধরে নিয়েই রাজনৈতিক ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রচার পর্ব শুরু করে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। পাশাপাশি দেওয়াল লিখনের জন্য দেওয়াল দখল করে লেখার কাজ শুরু হয়েছে। ক্যানিং মহকুমার দিঘীরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা দেওয়াল লিখনের জন্য দেওয়াল দখলের কাজ শুরু করেছে শাসক দলের নেতাকর্মীরা। তবে সেই দেওয়াল লিখন আবার লেখা হয়েছে গেরুয়া রঙ দিয়েই।
এলাকায় গেরুয়া রঙের ব্যবহার ও শুভেন্দু অধিকারীর পোস্টার ঘিরে রাজনৈতিক আঙিনায় শুরু হয়েছে জোর জল্পনা।
গতকাল, শুক্রবার রাজ্য রাজনীতিতে একটা ঘটনাবহুল দিন গেছে। মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারী। সে ইস্তফা গৃহীতও হয়েছে। দল না ছাড়লেও, সে সম্ভাবনা ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে এই পোস্টারের মাধ্যমে এই বার্তাই স্পষ্ট হচ্ছে, যে শুভেন্দু অধিকারীর হাত বেশ শক্ত।
তবে এই প্রথম নয়। শুভেন্দু অধিকারী ইস্তফা দেবেন কি দেবেন না, দল ছাড়বেন কি ছাড়বেন না, তাই নিয়ে যখন রাজ্যের শাসকদলের অন্দরে ও সাধারণ জনমানসে নানা দোলাচল চলছে, তখন থেকেই এই পোস্টার-কাণ্ড শুরু হয়েছে। গতকাল সকালেই শুভেন্দু অধিকারীর সমর্থনে পোস্টার পড়েছে উত্তরবঙ্গেও। দার্জিলিং ক্লক টাওয়ার, ম্যাল, চক বাজারে, শহর লাগোয়া লেবংয়ে, কার্শিয়ং স্টেশন এবং জিটিএ’র চেয়ারম্যান অনীত থাপার বাড়ির রাস্তায় পোস্টার পড়ে শুভেন্দুর ছবি দিয়ে। তাতে লেখা, “শারদোৎসব, কালীপুজো, ভাইফোঁটা, ছটপুজো এবং ২০২১-এর আগাম শুভেচ্ছা।” তার পরের লাইনে লেখা ‘দাদা আমরা গর্বিত তোমার জন্য।’ নীচে লেখা ‘আমরা দাদার অনুগামীরা।’ এবং পুরোটাই নেপালি ভাষায় লেখা।
বলাই বাহুল্য, তৃণমূলের পার্বত্য শাখার নেতাদের অস্বস্তি এতে বেড়েছে বই কমেনি। এর পরেই শুভেন্দুর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার কথা জানাজানি হয়।
গতকাল পাহাড়ের পরে আজ দক্ষিণবঙ্গের একাংশেও ফের একই রকম পোস্টারের দৃশ্য। শুধু উত্তর বা দক্ষিণবঙ্গই বা কেন। দিন কয়েক আগেই শিলিগুড়ি শহর জুড়ে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারীর ছবি সম্বলিত হোর্ডিং ঘিরে তীব্র জল্পনা তৈরি হয়। শুভেন্দুর ছবি সহ হোর্ডিংয়ে লেখা ছিল, ‘আমরা দাদার অনুগামী। কোনওটায় লেখা ‘আমরা গর্বিত।”
শাসকদলও ধন্দে পড়ে যায়, কারা লাগাল এই হোর্ডিং। পর্যবেক্ষকদের মতে, তৃণমূলের অনেক নেতাই এটা বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন, শুভেন্দু কুয়োর ব্যাঙ। পূর্ব মেদিনীপুরের বাইরে তাঁর কোনও ভিত্তি নেই। মন্ত্রীর অনুগামীরা হয়তো বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, দাদার জনপ্রিয়তা পাহাড় থেকে সাগর সর্বত্র।
এর দুদিন পরেই আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা কার্যালয়র উল্টোদিকের ডিভাইডারে ছবি ঝোলানো হয় শুভেন্দুর। জেলা কার্যালয়ের ব্যানারের দিদির ছবি। তার ঠিক উল্টোদিকেই শুভেন্দুর ছবি দিয়ে লেখা ছিল, দাদা তুমি এগিয়ে চলো, আমরা তোমার সাথে আছি। নীচে, আমরা দাদার অনুগামী।
এখানেই শেষ নয়। কয়েক দিন পরে মালদা শহরের প্রাণকেন্দ্র ফোয়ারা মোড়ে আচমকাই হলুদ-গেরুয়া রঙিন ব্যানারে তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারীর পোস্টার নিয়ে ব্যাপক রাজনৈতিক চাঞ্চল্য ছড়ায়। তবে এই পোস্টারে দেখা যায়, মালদার সমাজসেবী কাজল গোস্বামী নিজের নাম উল্লেখ করেই শুভেন্দু অধিকারীর পোস্টারটি লাগিয়েছেন। এবং এতে নীল-সাদা রঙের বদলে হলুদ, গেরুয়া-সহ বেশ কিছু রং জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এই পোস্টারে তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারীর ছবি দিয়ে উল্লেখ করা হয় “আমাদের আদর্শ , বাংলার গর্ব জননেতা শুভেন্দু অধিকারী।”
তার পরে তো দেওয়াল লিখন স্পষ্টই হয়ে গেল। গতকালই মন্ত্রিসভা ছাড়লেন শুভেন্দু। কিন্তু অনুগামীরা যে মোটেই তাঁর হাত ছাড়েননি, তা স্পষ্ট আজ দক্ষিণ ২৪ পরগনার নানা প্রান্তের পোস্টারগুলি দেখেই।