
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলায় রাজনৈতিক বিরোধীদের গাঁজা তথা মাদক কেস দেওয়ার অভিযোগ নতুন নয়। অধীর চৌধুরীরা দীর্ঘদিন ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ করছেন।
তবে এবার অভিনব এক ঘটনা দেখা গেল পূর্ব মেদিনীপুরে। দুর্গাচক থানায় এক রাজনৈতিক কর্মী একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, যে তিনি শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী। তাঁর ফোনে গত কয়েক দিন ধরে কয়েকজন ফোন করছেন। তাঁরা বলছেন যে, রাজনৈতিক রেষারেষির কারণে তাঁর বিরুদ্ধে খুব শিগগির মাদক কেস বা জাল নোটের ভুয়ো মামলা হতে পারে।
থানায় দায়ের করা অভিযোগে ওই রাজনৈতিক কর্মী আরও বলেছেন, তিনি গত ১১ বছর ধরে রাজনীতি করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি মামলা নেই। তিনি কখনও আইন অমান্য করেননি। সংবিধানের শর্ত মেনেই রাজনীতি করেছেন।
মিথ্যা গাঁজা কেস তথা মাদক মামলা নিয়ে কদিন আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন রাজ্যপাল। টুইট করে তিনি বলেছিলেন, “পূর্ব মেদিনীপুর এবং অন্যত্র রাজনৈতিক বিরোধীদের মিথ্যা মামলা ও মাদক আইনে ফাঁসানো হচ্ছে বলে ইনপুট পাচ্ছি। তা যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়। তাঁর কথায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্য পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র দফতরকে বলছি এ ধরনের অপরাধ (মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো) বন্ধ করতে হবে। রাজ্যপালের স্পষ্ট বক্তব্য, জেলা পুলিশ সুপাররা কিন্তু এজন্য দায়বদ্ধ থাকবেন।”
Concerned at inputs of vigorous moves #PurbaMedinipur and elsewhere to falsely implicate political opponents in criminal cases including under NDPS Act.
All @MamataOfficial @WBPolice @HomeBengal are alerted to curb this criminality.
District SPs squarely accountable.
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) November 13, 2020
রাজ্যপালের ওই টুইট নিয়ে সেদিন থেকেই আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছিল, পূর্ব মেদিনীপুরে রাজনৈতিক বিরোধী কারা। ওই জেলায় তৃণমূলের সভাপতি হলেন সাংসদ ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিশির অধিকারী। জেলায় রাজনৈতিক ভাবে সবথেকে বড় নেতা হলেন সেচ ও পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। ইদানীং শুভেন্দু একপ্রকার বিদ্রোহের বার্তা দিতে শুরু করেছেন। অরাজনৈতিক মঞ্চ থেকে বক্তৃতা দিচ্ছেন। তৃণমূলের প্রতীক ব্যবহার করে কোনও মঞ্চে থাকছেন না। তা নিয়ে অখিল গিরির মতো জেলা তৃণমূলের নেতারা আবার শুভেন্দুর সমালোচনায় নেমেছেন। পূর্ব মেদিনীপুরে ‘রাজনৈতিক বিরোধী’ বলতে রাজ্যপাল শুভেন্দুর অনুগামীদের বোঝাতে চেয়েছেন কিনা তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর ছাড়া রাজ্যপাল অবশ্য সেদিন অন্য এলাকার কথাও বলেছেন।
রাজ্যপালের সেদিনের টুইটের সঙ্গে অনেকেই এই রাজনৈতিক কর্মীর চিঠিকে জুড়ে দেখতে চাইছেন। পর্যবেক্ষকদের অনেকের কথায়, রাজনৈতিক বিরোধীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ব্যাপারে অতীতে বাম আমলে মহাকরণ ও আলিমুদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলত তৃণমূল। মনে করা হয়েছিল বাংলায় ক্ষমতা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেই সংস্কৃতি বন্ধ হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেই ট্রাডিশন সমানে চলছে। এখন সেই অভিযোগ উঠছে বর্তমান শাসকের বিরুদ্ধে।
আবার অনেকের মতে, শুধু বাংলা কেন সর্বভারতীয় স্তরে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেই এহেন বিষক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ সরকার, মহারাষ্ট্রে উদ্ধব ঠাকরে সরকার, কর্নাটকে ইয়েদুরাপ্পা সরকার, কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার—সকলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণতার অভিযোগ উঠছে। দশ বছর আগেও এমনটা ছিল না।