
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ফের মুখ খুললেন অভিনেতা তথাগত মুখোপাধ্যায়। অভিনেত্রী দেবলীনা দত্তর স্বামী এবার ফেসবুকে আলোচনা করলেন, হিন্দুধর্মের অন্যতম গ্রন্থ ‘বেদ’কে তলিয়ে দেখার কথা। লিখেছেন বিবেকানন্দ এ বিষয়ে কী বলে গেছেন, সে কথাও। তাঁর পোস্টে উঠে এল আবারও নানা যুক্তি-তর্ক। তিনি ধর্মগ্রন্থে লেখা বক্তব্য মেনেই প্রশ্ন তুললেন, ধর্ম রক্ষা করতে গিয়ে কেন ধর্মেরই নির্দেশ অমান্য করছেন কিছু নির্দিষ্ট মানুষ!
গত কয়েকদিন ধরেই রাজ্য রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে গেছে বিভিন্ন অভিনেতার নাম। তবে রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের যে একটা যোগাযোগ রয়েছে তার প্রমাণ ইতিহাসের পাতায় তাকালেই পাওয়া যাবে। ধর্মের দোহাই দিয়ে বেঁধে ফেলা হয় মানুষের স্বাধীনতার আকাশকে, আর এতে যদি কেউ বাধা দেয় তাহলেই ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লেগে যায়।
কিছুদিন আগেই বাক্-স্বাধীনতা ও নিজের পছন্দের খাবারের কথা বলার জন্য দেবলীনা দত্ত মুখার্জীকে সরাসরি সোশ্যাল মিডিয়াতে আক্রমণ করা হয়। তাঁর দোষ? দেবলীনা একটি সংবাদমাধ্যমের টক শো-তে বলেছিলেন তিনি নিজে নিরামিষাশী হলেও গোরুর মাংস, পাঁঠার মাংস খুব ভাল রান্না করেন আর সেটা অষ্টমী হোক বা নবমী যে কোনও দিনেই রান্না করতে পারবেন! এ বিষয়ে তাঁর কোনও ছুৎমার্গ নেই। আর এতেই ঘটে যত বিপত্তি। তাঁকে ফেসবুকে থ্রেট করা শুরু হয়। ধর্ষণ থেকে ‘রেট’ কত, এরকম নানা কুমন্তব্য করা হয় দেবলীনা সম্পর্কে। এমনকি বাদ দেওয়া হয়নি তাঁর মাকেও।
একথা স্পষ্ট হয়ে যায়, যে কোনও একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের তরফেই সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে চলে এই খাপ পঞ্চায়েতি। তবে এখানেই ব্যাপারটা থামেনি, জল গড়ায় থানা পর্যন্ত। বিজেপির নেতা তরুণজ্যোতি তিওয়ারি দেবলীনার নামে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত আনার জন্য অভিযোগ দায়ের করেন। অপর দিকে অভিনেত্রীও আইনের সাহায্য নিতে চান তাঁকে থ্রেট করার জন্য। দেবলীনার স্বামী তথাগত এর আগে ফেসবুকে পোস্ট করে বিষয়টি জানান।
আবারও তিনি লিখলেন। এবার তিনি উদ্ধৃত করলেন স্বামী বিবেকানন্দকে।, “বেদের কোন কোন অধ্যায় ও শ্লোকে গরু ও অনান্য প্রাণীর মাংস খাওয়ার বিধান রয়েছে। আমি বা অন্য কেউ না হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বলছে।” একথা লিখে তিনি নির্দিষ্ট বেদের সুনির্দিষ্ট অধ্যায়গুলোও চিহ্নিত করে দেন পোস্টে। লেখেন, “বৃষের মাংস (বেদ-১/১৬৪/৪৩), মহিষের মাংস (বেদ-৫/২৯/৮), অজের মাংস (বেদ-১/১৬২/৩), গো-মাংস (বেদ-৪/১/৬), ভগবান ইন্দ্রের জন্য গো-বৎস অর্থাৎ বাচ্চা গরুর মাংস উৎসর্গ করা হয়েছে (ঋকবেদ ১০/৮৬/১৪), তাছাড়া বেদজ্ঞান লাভের জন্য, স্বাস্থ্যবান সন্তান লাভের জন্য ষাঁড়ের মাংস ভক্ষনের নির্দেশ তো ঋকবেদেই রয়েছে।”
একথা উল্লেখ করে তথাগত লেখেন, “কারোর চোদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করার আগে একটু নিজেদের ধর্মগ্রন্থগুলো পড়ুন। সেখানে আরো অনেককিছুই লেখা আছে। এই ফেসবুকে ধর্মরক্ষাকারী বলে প্রতিনিয়ত যারা আকাশ বাতাস মুখরিত করেন তারা হিন্দুধর্মের শাস্ত্রগ্রন্থগুলি কতটা পড়েছেন সেই নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। অধিকাংশই বোধহয় পড়েননি। কারন এরা প্রতিদিন নিজেরাই বিধর্মী কাজ করেন নিজের অজান্তেই।”
তাঁর আরও বক্তব্য, “হিন্দু ধর্মে বিভিন্ন অবতারের কথা বলা হলেও,হিন্দু ধর্মশাস্ত্রগুলোর কোনটিতেই কোথাও গরু অবতারের কথা লেখা নেই। মৎস্য অবতারের কথা যদি বিশ্বাস করি- তবে মাছ খাওয়া মানেই তো স্বয়ং ঈশ্বরের মাংস ভক্ষন করা। বিশ্বাসীদের অমার্জিত অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত।”
সব শেষে স্বামী বিবেকান্দের বাণী দিয়েই শেষ করেন নিজের পোস্ট। এই পোস্টে অনেকেই সমর্থন করেছেন অভিনেতাকে। পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর ও দেবলীনার। অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন, এত যুক্তি ও ধর্মের কথা খতিয়ে ভাবার অবকাশ নেই গেরুয়া-বাহিনীর প্রতিনিধিদের। তবে সে যাই হোক না কেন, গোমাংস রান্না নিয়ে চলতে থাকা বিতর্ক যে এখনই থামছে না, সে কথা স্পষ্ট।