দ্য ওয়াল ব্যুরো: কথায় বলে, কারও পৌষমাস কারও সর্বনাশ। তবে শুধু কথায় নয়, বাস্তবেও যে এমন হরহামেশাই ঘটে, তার নিদর্শনও কম নয়। সাম্প্রতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে চোখ রাখলেই এমনটা দেখা যাচ্ছে প্রায়ই। মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়ের সাম্প্রতিক একটি টুইটও যেন তেমনই। আপাত ভাবে নিরীয় টুইটটি বুঝিয়ে দিচ্ছে, রাজীবকুমারকে সিবিআই জেরার জন্য সুপ্রিম কোর্ট শিলংয়ে আসার নির্দেশ দেওয়ায় বেশ পুলকিত হয়েছেন রাজ্যপাল তথাগত।
কেউ কেউ বলছেন, এই সুযোগে রাজনৈতিক ভাবে সূক্ষ্ম বিদ্রূপ করে নিলেন প্রাক্তন রাজ্য বিজেপি সভাপতি।
সম্প্রতি সারদা কাণ্ডের তদন্তে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআই হানা এবং সেই কারণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্ণার পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক টানাপড়েন। এই অবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, মেঘালয়ের শিলংয়ে সিবিআইয়ের জেরার মুখে বসতে হবে রাজীব কুমারকে। শুধু তা-ই নয়, এই জেরায় আর এক সারদা-অভিযুক্ত কুণাল ঘোষকেও ডেকেছে সিবিআই।
সব ঠিক থাকলে রোববারই হওয়ার কথা এই জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব। আর সেই আবহেই তথাগত রায় টুইট করে লিখলেন, “মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট খুবই ভাল কাজ করেছে, রাজীব কুমারকে সিবিআইয়ের জেরার জন্য শিলংকে বেছে নিয়ে। এখানে এখন দুর্দান্ত আবহাওয়া। রোডোডোনড্রন ফুল ফুটতে শুরু করবে খুব শিগ্গিরি। আমি নিশ্চিত, সব অতিথির জন্য সরকারের তরফে আতিথেয়তায় কোনও ত্রুটি থাকবে না। পূর্বের স্কটল্যান্ডে সকলকে স্বাগত!”
দেখে নিন সেই টুইট।
Hon'ble Supreme Court has very wisely chosen Shillong for CBI's questioning Rajeev Kumar. Weather now is glorious,the rhododendrons will start blooming in a while. I'm sure the government will arrange for a comfortable venue for the parties. Welcome to the Scotland of the East!
— Tathagata Roy (@tathagata2) February 5, 2019
আপাত ভাবে এটা নিছক ‘ওয়েলকাম গ্রিটিং’ বলে মনে হলেও, রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, আদতে এই টুইটের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে সূক্ষ্ম খোঁচা। একটি রাজ্যের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব পেলেও, তথাগত রায় যে রাজনৈতিক ভাবে বিজেপির কট্টর সমর্থক, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজ্যপাল থাকা অবস্থাতেই বহু বার তাঁরই নানা মন্তব্য, টুইট, বিতর্ক সে কথাই পরিষ্কার করেছে।
এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের তদন্তকারী দল সিবিআই, তৃণমূলশাসিত রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ কমিশনারকে শেষমেশ জেরা করছে এত টানাপড়েনের পরেও, তা বিজেপি নিজেদের জয় বলেই মনে করছে। অনেকেই বলছেন, সেই দম্ভেরই আলতো প্রকাশ রয়েছে তথাগত রায়ের বক্তব্যে।
রাজনীতির আঙিনায় রাজ্যপালের পদ সমস্ত দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকার কথা। কিন্তু তথাগত রায়ের ক্ষেত্রে সে কথা বারবারই বদলে গেছে। রাজ্যপালের আসনে বসার পরেও বারবারই বিজেপি নেতাদের মতোই আচরণ করেছেন তিনি। তাঁর টুইটার হ্যান্ডেলেও দেখা যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ব্যঙ্গ করে লেখা একাধিক পোস্ট রিটুইট করেছেন তিনি নিজে। স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন বিরোধিতা।
কিন্তু এবার সরাসরি কোনও বিরোধিতা না করে, একটিও বিতর্কিত শব্দ ব্যবহার না করে, কেবল স্বাগত-সম্ভাষণের মধ্যে দিয়েই তিনি সবটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি যেন বলতে চেয়েছেন, শিলংয়ের এই মনোরম আবহাওয়ায় রাজীব কুমার, কুণাল ঘোষের মতো তারকাদের উপস্থিতি খুবই সুন্দর একটা ব্যাপার। সেটাকে উদযাপন করতেই সরকারি খাতিরদারির কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
এক তৃণমূল নেতার কথায়, আসলে এটা যেন বাড়িতে ডেকে এনে অপমান করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। এই সময়ে শিলংয়ের আবহাওয়া যতোই সুন্দর থাকুক, ফুল যতই ফুটুক, তাঁর উল্লেখ করা ‘অতিথি’দের জন্য যে এখন সব ফুলই কাঁটার সমান, তা ভালই জানেন তথাগত। আর তাই, সব জেনেশুনেই, স্বাগতবার্তায় মুড়ে তাঁর চাপা আনন্দ ভাসিয়ে দিয়েছেন টুইটারে।