
মানবিক চিকিৎসক, করোনায় মৃতের দেহ নিজেই শ্মশানে নিয়ে গেলেন ট্রাক্টর চালিয়ে
কোনও অ্যাম্বুলেন্স ছিল না। ছিল পুরসভার একটি ট্রাক্টর। কিন্তু তার চালক করোনা রোগীর দেহ নিয়ে যেতে অস্বীকার করেন। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে ৪৫ বছরের ওই চিকিৎসক শ্রীরাম ঠিক করেন, নিজেই ট্রাক্টর চালিয়ে দেহটি শ্মশানে পৌঁছে দেবেন। যা ভাবা তাই করেন তিনি।
দ্য ওয়াল ব্যুরো: নিজের সংক্রমণের আশঙ্কার তোয়াক্কা না করে তেলঙ্গানার এক চিকিৎসক নিজেই ট্রাক্টরে করে শ্মশানে নিয়ে গেলেন করোনা আক্রান্তের মৃতদেহ।
তেলেঙ্গানার ওই চিকিৎসকের নাম পেন্ডিয়ালা শ্রীরাম। তিনি পেডাপল্লী জেলায় মেডিক্যাল সারভাইল্যান্স অফিসার। রবিবার স্থানীয় একটি হাসপাতালে ওই করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। সেই সময়ে পেডাপল্লী সরকারি হাসপাতালে কোনও অ্যাম্বুলেন্স ছিল না। ছিল পুরসভার একটি ট্রাক্টর। কিন্তু তার চালক করোনা রোগীর দেহ নিয়ে যেতে অস্বীকার করেন। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে ৪৫ বছরের ওই চিকিৎসক শ্রীরাম ঠিক করেন, নিজেই ট্রাক্টর চালিয়ে দেহটি শ্মশানে পৌঁছে দেবেন। যা ভাবা তাই করেন তিনি।
আরও পড়ুন
অ্যাম্বুলেন্সের ইঞ্জিন চুরি! অভিযোগ তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে
ডাক্তারবাবু ট্রাক্টর চালাতেও জানেন! সবাই তো অবাক হয়ে যায়। শ্রীরাম জানিয়েছেন, তাঁর নিজস্ব চাষের জমি আছে আর সেই জমিতে তিনি নিজে হাতে চাষবাসও করেন। আর সেই কারণে ট্রাক্টর চালাতেও জানেন তিনি।
এমন মানবিক চিকিৎসকের জীবনে আছে এক দুঃখ ভরা কাহিনি। বছর দুই আগে তাঁর ১৮ বছরের ছেলে বেঙ্গালুরুতে পথ দুর্ঘটনায় মারা যায়। আর তখনই এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন শ্রীরাম। ময়নাতদন্তের পর দেহ পেতে পেতে অনেক সময় লেগে গিয়েছিল। প্রায় ২০ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাঁকে। সেই অভিজ্ঞাতাতেই তিনি জানেন মৃতের পরিজনদের কাছে দেহ পেতে দেরি হওয়াটা কতটা যন্ত্রণার। সেই কথা মাথায় রেখেই চালক নারাজ হলে তিনি ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক্টর চালিয়ে দেহ নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
শ্রীরাম যে হাসপাতালের চিকিৎসক সেই পেডাপল্লী সরকারি হাসপাতালে করোনা সংক্রমণে এটাই প্রথম মৃত্যু। ওই জেলায় যদিও এখনও পর্যন্ত আট জনের করোনায় মৃত্যু হয়েছে। শ্রীরাম জানিয়েছেন, হাসপাতালে প্রথম কোনও করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হওয়ায় কর্মীরা বুঝতে পারছিলেন না, কী করা দরকার। প্রটোকল মেনে দেহ কীভাবে বাঁধা হবে তাও কারও জানা ছিল না। ওই হাসপাতালে মর্গও নেই। ফলে দেহ সংরক্ষণেরও উপায় ছিল না। ওই হাসপাতালের এমনকী একটা অ্যাম্বুলেন্সও নেই। শ্রীরাম জানিয়েছে, তাঁর কাছে মৃত্যুর খবর আসাতেই তিনি হাসপাতালে যান। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পরে দেহটি নিয়ে কী করা যায় সে ব্যাপারে পুলিশ ও পুরসভার সঙ্গেও কথা হয়।
অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় পুরসভা একটি ট্রাক্টর পাঠিয়ে দেয়। করোনা প্রটোকল মেনে দেহটি প্যাক করেন শ্রীরাম নিজেই। এর পরে ট্রাক্টর চালক করোনা রোগীর দেহ নিয়ে যেতে অস্বীকার করেন এবং ট্রাক্টর ফেলে দৌড়ে পালান। এর পরে পিপিই পরে নেন শ্রীরাম। মৃতের পরিবারের ৪ সদস্যকেও পিপিই পরতে বলেন। তাঁদেরই সাহায্যে দেহ ট্রাক্টরে তোলেন আর নিজেই তা চালিয়ে ২ কিলোমিটার দূরে শ্মশানে চলে যান।