
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাজধানী দিল্লির আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে আরেকটা দিল্লি। রাত গড়ালে যে শহর জেগে ওঠে। তারপর ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেরোয় কুলদীপ মান ওরফে ফাজ্জা, গোগি, কপিল সাঙ্গওয়ান কিংবা হাশিম বাবারা। দিল্লি-বলয়ের অন্ধকার জগতের কুখ্যাত দুষ্কৃতী এরা। ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড’ তকমা নিয়ে যারা লোকমুখে নানান সত্যি-মিথ্যে মেশানো কিংবদন্তী সমেত ঘুরে বেড়ায়। নিজেদের মধ্যে রেষারেষি তো রয়েছেই। তা ছাড়া টাকার গদিতে বসে থাকা ধনকুবের থেকে প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রী কিংবা খ্যাতিমান অভিনেতা — ‘গ্যাং’-এর র্যাডার থেকে মুক্ত নয় কেউই।
গত ২৭ মার্চ দিল্লি পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে মারা যায় কুলদীপ মান ওরফে ফাজ্জা। পুলিশি রিপোর্ট অনুযায়ী, এই দুষ্কৃতী হাসপাতাল থেকে পালানোর চেষ্টা করছিল। তখনই শ্যুট আউটে নিকেশ হয় সে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, এই একটা অপারেশন প্রশাসনের সামনে সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে আসে। ধরা পড়তে থাকে দুষ্কৃতী দলের একের পর এক সদস্য।
আর সেই সূত্রেই বিভিন্ন গ্যাংয়ের ঠিকুজি-কুলজি পুলিশের হাতে আসতে শুরু করে। এক একটা দল ঠিক কীভাবে চালানো হয়, কারা সেসবের চাঁই হয়ে বসে রয়েছে, মূল চক্রী জেলে থেকেও কোন উপায়ে গোটা দলকে ‘অপারেট’ করে যায়, প্রযুক্তিকেই বা কীভাবে হাতিয়ার করেছে অন্ধকার জগতের কারবারিরা— উঠে আসতে থাকে একের পর এক রোমহষর্ক তথ্য।
২৭ মার্চের এনকাউন্টারের পর ২ এপ্রিল। ফের একবার সাফল্য লাভ করে দিল্লি পুলিশের বিশেষ শাখা। এবার ফাঁদে ধরা পড়ে লরেন্স বিশ্নৈ-কালা জাঠেডি গ্যাংয়ের পাঁচ সদস্য। তাদের প্রত্যেকের মাথায় মোট ১৭টি কেসের খাঁড়া ঝুলছিল বলে খবর৷ খুন, ধর্ষণ, ডাকারি, চুরি, ছিনতাই— দুষ্কর্মের তালিকা বেশ লম্বা। আর ঠিক ততটাই লম্বা অপারেশনের দুনিয়াটাও।
দিল্লি, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড — উত্তর-পশ্চিম ভারতের একটা বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে অবাধে রাজপাট চালাত এই কুখ্যাত গোষ্ঠী। জিজ্ঞাসাবাদের পর গোয়েন্দাদের হাতে জানা-অজানা হরেক তথ্য উঠে আসতে থাকে। ঠিক এরপরই পরপর সমস্ত গোষ্ঠীকে ট্র্যাক করার কাজ শুরু হয়। পুলিশি পরিভাষায় যার নাম ‘সিস্টেমেটিক ক্র্যাকডাউন’। ফাজ্জার এনকাউন্টার যেন একটা মস্ত বড় ফ্লাডগেট খুলে দেয়।
প্রাথমিকভাবে জানা যায়, সমস্ত গ্যাংয়ের মধ্যেই কয়েকটা সাধারণ জিনিস রয়েছে৷ গ্যাংস্টাররা নিজেদের ‘রবিনহুড’ ভাবতে পছন্দ করে! অর্থাৎ, অবাধে রাজত্ব ফলানো, বীরত্ব দেখানোয় প্রচণ্ড গর্ব অনুভব করে তারা। এ ছাড়া সবারই লুঠতরাজের ভূস্বর্গ দিল্লির বাইরের অঞ্চল, যেমন — রোহিণী, দ্বারকা, নজফগড় হলেও তারা আদতে হরিয়ানা-পাঞ্জাব-দিল্লি বলয় থেকে ‘অপারেট’ করে।
যেমন, লরেন্স-বিশ্নৈ। বিশ্নৈ ফিরোজপুরের বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে আজমীর জেলে বন্দি। ২০১৮ সালে সলমন খানকে মৃত্যুর হুমকি দেওয়ার জেরে তার খবরের শিরোনামে আসা। পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটির এই প্রাক্তনীর মাথায় আপাতত ২০টি কেসের খাঁড়া ঝুলছে৷
পুলিশ জানতে পেরেছে, তার দলের সঙ্গে লাগাতার কালা জাঠেডি গ্যাংয়ের টক্কর চলে। পিছিয়ে নেই গোগি গ্যাং কিংবা সুনীল তিল্লুর গোষ্ঠীও। গ্যাং ওয়ার শুরু হলে নাবালকদের ভিড়িয়ে দেওয়ার রেওয়াজ অনেক দিনের৷ যাতে ধরা পড়লেও আইনের ফাঁক গলে রেহাই পাওয়া যায়। তা ছাড়া রয়েছে প্রযুক্তির ব্যবহারও। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপকে হাতিয়ার করে দেশের যে কোনও কোণ থেকে নির্দেশ পাঠায় দলের মাথারা। তারপর শুরু হয় সেগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার পালা।
আপাতত এই সূত্রগুলোকেই একজোট করতে চাইছে দিল্লি পুলিশ৷ তারপর বোনা হবে হবে ধরপাকড়ের নীল নকশা — ‘সিস্টেমেটিক ক্র্যাকডাউন’!