
ডোমজুড়ে খেলা হল, পরে বল করে মমতার ব্যাটের গোড়ায় একের পর এক ইয়র্কার রাজীবের
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এই ভোটে তৃণমূলই স্লোগান তুলেছে ‘খেলা হবে’!
শনিবার ডোমজুড়ে ভোট। তার আগে কাল্পনিক স্টেডিয়ামে যেন রোমহর্ষক টি-টোয়েন্টি হল। প্রথমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুসরা। পরে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইয়র্কার। দুই ব্যানার্জি পরিবারের মেয়ে ও ছেলের মধ্যে সেই আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণ যতটা বিস্ফোরক, ততটাই ধারালো।
শুরু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। ডোমজুড়ে শেষ প্রহরের প্রচারে গিয়েছিলেন তিনি। শুরুতেই দিদি বলেন—
• “ডোমজুড়ের মানুষের কাছে আমরা ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, একটা গদ্দারকে আগের বার নমিনেশন দিয়েছিলাম। আমি বুঝতে পারিনি। দেখতে টেখতে একটু ফর্সাটর্সা। লম্বা লম্বা দেখতে। কী করে বুঝব তার ভিতরে এত প্যাঁচ? এত গদ্দারি লুকিয়ে আছে! সেই গদ্দার মিরজাফর জনগণের টাকা মেরে দিয়েছে, আমি যে চাকরিগুলো করে দিয়েছি সেগুলোতে নানান কারসাজি করেছে।” এটাকেই ধরে নিতে পারেন দুসরা। অর্থাৎ নরম করে মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা। কিন্তু তার পরই যেন আচমকা ইন স্যুইংঙ্গার দিয়ে মমতা বলেন,“জিজ্ঞেস করুন কলকাতায় কত জায়গা আছে তোমার? কলকাতা থেকে দুবাই কত সম্পত্তি করেছ? জবাব দাও, তারপর ভোট চাও।”
• মমতার দাবি, “আমি তো এসব জানতামই না। আমি এসব লোকের কাছে শুনছি। আগে জানলে তো অনেকদিন আগেই আমি সরিয়ে দিতাম।”
• দিদি আরও বলেন, “প্রথমে ও ছিল সেচ মন্ত্রী। পরে আরও দফতর পেয়েছিল, আমার অত মনে নেই! যখন সেচে ছিল, তখন আমি কিছু অভিযোগ পেলাম। কিছু টাকার অভিযোগ পেলাম। যখন পেলাম তখন ওখান থেকে ওকে আমি সরিয়ে দিলাম। দিয়ে বন দফতর দিলাম। ও আমায় কী বলে জানেন, আমায় একটা ইঞ্জিনিয়ারং ডিপার্টমেন্ট দেওয়া হোক। মানে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট দিলে টাকাটা ভাল করে বাড়বে আর কী! কমিশনটা বেশি করে খাবে…!”
রাজ্য রাজনীতিতে রাজীব বরাবরই জেন্টলম্যান রাজনীতিক হিসাবে পরিচিত। গলার স্বর নামিয়ে কথা বলেন। টিপিক্যাল রাজনীতিক সুলভ আচরণ নেই। তাঁকে রেগে যেতে বা বিরক্তি প্রকাশ করতেও খুব একটা কেউ দেখেনি। কিন্তু বুধবার মমতার কথা শুনেই প্রচণ্ড বিরক্তি প্রকাশ করেন রাজীব। তার পর যেন একের পর এক ইয়র্কার ফেলতে শুরু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাটের গোড়ায়। তাঁর কথায়—
• “আমি বলি কি, উনি একবার আয়নায় মুখ দেখুন। বাংলার রাজনীতিতে সব থেকে বড় বিশ্বাসঘাতককে দেখতে পাবেন। ৮৪ সালে যে কংগ্রেস তাঁকে লোকসভার টিকিট দিয়েছিল, যে কংগ্রেস তাঁকে কেন্দ্রে মন্ত্রী করেছিল, স্রেফ ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্খার জন্য উনি সেই কংগ্রেসের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এবং তা বারবার করেছেন। উনি দাবি করেন, সিপিএমকে সরানোর জন্য কংগ্রেস ভেঙেছিলেন। কিন্তু সেই কংগ্রেসের সমর্থন নিয়েই তো এগারো সালে জিততে হয়েছিল। তা হলে কি কংগ্রেস ভাঙার যুক্তি দাঁড়ায়? ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্খাই দল ভাঙার ক্ষেত্রে বড় কারণ ছিল না?”
• উনি বিজেপির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। যে বিজেপির সমর্থন নিয়ে উনি বাংলায় ৯টি লোকসভা আসন জিতেছিলেন, যে বাজপেয়ী-আডবাণী তাঁকে রেলমন্ত্রী করেছিলেন, উনি তাঁদেরও বিশ্বাস ভেঙেছেন। সেদিন বিজেপি পাশে না থাকলে ওনার পার্টিটাই উঠে যেত”।
• “রাজীব যাতে দল না ছাড়েন, সে জন্য তাঁর সঙ্গে বারবার কথা বলেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশান্ত কিশোর প্রমুখ। রাজীব এদিন বলেন, আমি যদি দুর্নীতি পরায়ণ হই তা হলে কেন সেদিন আমাকে ধরে রাখতে ফৌজ পাঠিয়েছিলেন?”
• দুবাইয়ে সম্পত্তি, কলকাতায় বাড়ি প্রসঙ্গেও তাঁর জবাব—“হলফনামায় যা সম্পত্তির হিসাব দিয়েছি, তার বাইরে আমার নামে ন’পয়সার জিনিস দেখাতে পারলে সব ছেড়ে দেব”।
• শেষে ব্লক হোলে বল ফেলতে চেয়েছেন রাজীব। তিনি বলেন, “আমি যখন সেচ মন্ত্রী ছিলাম, ভাইপো বিনয় মিশ্রকে পাঠিয়েছিল কমিশন তোলার জন্য। না করে দিই। বলেছিলাম, এ সব আমার দ্বারা হবে না। সেই জন্যই তো সেচ দফতর থেকে সরিয়েছিলেন। তার পর সেচ দফতরে কারা কী করতেন, বলব নাকি! হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিতে পারি।”
• রাজীবের কথায়, “স্রেফ রাজনীতির জন্য এক জন মুখ্যমন্ত্রী এমন মিথ্যা কথা বলতে পারেন, ভাবলেই ঘৃণা হচ্ছে। এতোদিন ওই দল করেছি, সেটা ভাবলেও খারাপ লাগছে।”
ডোমজুড়ে সংখ্যালঘু ভোটের সংখ্যা কম নয়। সেখানে বিজেপি প্রার্থী হয়ে দাঁড়ানোও তাই কম চ্যালেঞ্জ নয়। তা সত্ত্বেও আসন পরিবর্তন করতে রাজীব কখনওই রাজি হননি। বরং জোর করেই ডোমজুড়ে প্রার্থী হয়েছেন। সেই সঙ্গে এবারও ভোটের প্রচারে বারবার সমাবেশী রাজনীতির কথা বলেছেন। তৃণমূলে থাকাকালীন ডোমজুড়ে স্থানীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে রাজীবের জনপ্রিয়তা ছিল ভালই। শুভেন্দু অধিকারীর মতোই তাঁর নির্বাচনকে কেন্দ্রকে সময় দিয়েছিলেন তিনি। দল বদলের পরেও সেই জনভিত্তি রাজীব ধরে রাখতে পারেন, নাকি মানুষ মমতার কথায় প্রভাবিত হন এখন সেটাই দেখার।