
বারবার জড়িয়ে ধরুন সন্তানকে, সোহাগ করুন প্রাণ ভরে, তবেই বিকশিত হবে কোমল মস্তিষ্ক
দ্য ওয়াল ব্যুরো: চাকরিরতা বহু মেয়েই বাড়ি আর অফিসের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে পারেন না। সবটা মিলিয়ে তো একেবারে নাজেহাল অবস্থা। তার মধ্যে এইবছর ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এর কারণে ঘরের কাজ, অফিসের কাজ সামলাতে সামলাতেই সারাদিন কেটে। যায়। এমনকি নিজের জন্য সময় বের করতেও অপারগ হন। কিন্তু এত কিছুর মাঝে আর কাউকে না হোক, নিজের ছোট্ট সন্তানকে সময় দিতে ভুলে যাচ্ছেন না তো?
ছোট্ট শিশুদেরও কিন্তু অভিমান হয়। ধীরে ধীরে বড় হলে অনেকেই এই অভিমান ভুলে যায়, আবার অনেকেই মনে রেখে পরিবারের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব বজায় রাখে। আসলে মা-বাবা-র সঙ্গে কতটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হবে, সেটা খানিকটা ছোটবেলার উপরই নির্ভর করে।
ছোট থেকেই যদি তাদের সময় না দেওয়া হয়, তখন থেকেই একটা খারাপ-লাগা কাজ করে। অনেক সময় দেখা যায় প্রচুর খেলনা, পুতুল, বন্ধু থাকার পরেও শিশু নিঃসঙ্গতায় ভোগে। কারণ অনেকেই মা-বাবাকে অভিভাবকের থেকেও বন্ধু মনে করে। তাই ব্যবস্ততার জীবনের ছোট্ট সন্তানকে সময় দিতে ভুলবেন না।
ডাক্তাররা জানাচ্ছেন, শত কাজের মাঝেও ছোট্ট সন্তানকে জড়িয়ে ধরতে ভুলবেন না। প্রতিদিন অন্তত একবার। কিন্তু কেন জড়িয়ে ধরার প্রতি জোর দিচ্ছেন তাঁরা? জেনে নিন –
১. আপনি সন্তানকে কতটা ভালবাসেন, সেটা বোঝানোর সবথেকে সহজ পন্থাই হল মাঝে মাঝে জড়িয়ে ধরা। একটি রিসার্চে জানা গেছে শিশুদের দিনে অন্তত ৭ থেকে ৮ বার জড়িয়ে ধরা উচিত।
২. মাঝে মাঝেই জড়িয়ে ধরে মা-বাবার সঙ্গে খুনসুটি করতে ভালবাসে শিশুরা। সেটারও দরকার আছে। তার উপরও নির্ভর করে তাদের মন, মানসিক স্বাস্থ্য কেমন থাকবে।
৩. এই আদর, জড়িয়ে ধরা, এগুলো একটা শিশুকে বাড়তে সাহায্য করে। এর উপরও গ্রোথ খানিকটা নির্ভর করে। বিজ্ঞানে বলা হয়, যেসমস্ত শিশুরা কারোর কাছে যায় না, বা কারোর সংস্পর্শে আসতে পছন্দ করে না, তাদের বেড়ে উঠতে সময় লাগে। এটাকে বলা হয় ‘ফেলিওর টু থ্রাইব’। তাই যখনই সময় পাবেন শিশুদের আদর, যত্নে ভরিয়ে তুলুন।
৪. এই আদরটুকুই একটা শিশুকে প্রাণোচ্ছল করে তোলে। ছোট থেকেই স্মার্ট হতে সাহায্য করে। একটি ইউরোপিয়ান স্টাডি থেকে জানা যায়, জড়িয়ে ধরলে শিশুদের ত্বক, মা, বাবার ত্বকের সঙ্গে ছোঁয়া পায়, যার ফলে তাদের মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে।
৫. অনেক শিশুরাই জন্মের পর থেকে অতিরিক্ত ইমোশনাল হয়ে যায়। অন্যান্য শিশুদের থেকে তাদের রাগ, ক্ষোভ, জেদ বেশি হয়। অনেক সময় চিৎকারও করে। তাদের মাঝে মাঝে জড়িয়ে ধরে আদর করতে বলছেন ডাক্তাররা। জড়িয়ে ধরলে অক্সিটোকিন নামের যে হরমোন আছে, সেটা নির্গত হয়। ফলে তারা শান্ত থাকে, বুঝতে পারে তাদেরকেও কেউ ভালবাসছে।
৬. বিশ্বাস করবেন কি না জানা নেই, তবে বলা হয় জড়িয়ে-ধরা টাও শরীরে ইমিউনিটি ব্যুস্ট করতে সাহায্য করে। শিশুদের জোর, বা কোনও অসুখ হলে, তখনও মাঝে মাঝে জড়িয়ে ধরুন। রোগ সারতেও কিছুটা সময় কম লাগবে। এই সময় মানসিক ভাবে ভেঙেও পড়বে না।
৭. জড়িয়ে ধরে আদর করলে, তারা ভীষণ আনন্দে থাকে। ডাক্তাররা বলেন ছোট থেকেই শিশুদের আনন্দে রাখাটা প্রয়োজন। বড় হলে বিভিন্ন সময় এটা তাদের সাহায্য করে।
৮. এই সময় থেকেই বোঝা যায় ভবিষ্যতে সম্পর্ক কেমন থাকবে। না, আদরের অত্যাচার করবেন না। শিশুরা সেটাও পছন্দ করে না। কিন্তু তাদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানো, গল্প করা, খেলা, এইসব মিলিয়ে বন্ধু হয়ে ওঠাটা ভীষণ প্রয়োজন। সেই দিকে বিশেষ নজর দিন।
৯. অতিরিক্ত শাসন করলেই যে শিশুরা সবসময় কথা শুনবে, বা হবে এটা ভাববেন না। কঠোর শাস্তির কথা না শুনিয়ে, আদর দিয়েও তাদের বোঝাতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এতেও শিশুরা নিজে থেকেই ডিসিপ্লিনড হতে চেষ্টা করে।