
দিদির তালিকা জুড়ে টালিগঞ্জের ভাইবোনেরা, কাল দলে যোগ দিয়ে আজই প্রার্থী
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আগে আকছার শোনা যেত টলিপাড়ার রাজনীতির কথা। শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করলেন, তাতে হয়তো তৃণমূলের অতি বড় সমর্থকও থ হয়ে গেছে! টলিপাড়াটাই যেন উঠে এসেছে তৃণমূলে। এমনকি হেঁয়ালি করে কেউ কেউ বলছেন, রাজনৈতিক দল তো নয়, যেন শিল্পী সংসদ!
গতকাল বৃহস্পতিবারই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন কীর্তন শিল্পী অদিতি মুন্সি। তাঁর অবশ্য অন্য পরিচয়ও রয়েছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ যুব তৃণমূল নেতা দেবরাজ চক্রবর্তীর স্ত্রী তিনি। তাঁকে মমতা প্রার্থী করেছেন রাজারহাটে।
গত পরশু তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিদি তাঁকে প্রার্থী করেছেন বাঁকুড়ায়। পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রার্থী করা হয়েছে জুন মালিয়াকে। বছর খানেক আগেও চলচ্চিত্র উৎসবে শুধু মুখ্যমন্ত্রীর ছবি সাঁটা নিয়ে সরব ছিলেন যে বিদ্রোহী নেত্রী, সেই সায়নী ঘোষ এখন দিদির অনুরাগী। তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে আসানসোল দক্ষিণ আসনে।
কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান তথা পরিচালক রাজ চক্রবর্তীকে প্রার্থী করা হয়েছে ব্যারাকপুরে। অভিনেত্রী লাভলি মিত্রকে প্রার্থী করা হয়েছে সোনারপুর দক্ষিণে। অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিককে দিদি প্রার্থী করেছেন উত্তরপাড়ায়। সোহম চক্রবর্তী প্রার্থী হচ্ছেন চন্ডীপুরে আর সাঁওতালি ছবির নায়িকা বীরবাহা হাঁসদাকে প্রার্থী করা হয়েছে ঝাড়গ্রামে। সোহম ছাড়া এঁরা সকলেই গত এক মাসের মধ্যে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।
শুক্রবার দিদি যখন প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করছিলেন, তখন দেখা যায় কলকাতার একটি বহুতলে একইসঙ্গে বসে রয়েছেন রাজ চক্রবর্তী, সায়ন্তিকা, সায়নী, কাঞ্চন ও জুন মালিয়া। রাজ বলেন, “আমি জন্মেছি হালিশহরে, বড় হয়েছি কাঁচরাপাড়ায়। আমি তো এলাকারই ছেলে, গলি তস্য গলি চিনি। মানুষ যেন আমাকে তারকা হিসাবে না দেখে। আমি দিদির দূত হয়ে কাজ করতে চাই।”
সায়নী ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক কথায় চৌখস হয়ে উঠেছেন। তিনিও মানুষের হয়ে কাজ করা, সোনার বাংলা গড়ার মতো স্বপ্নের কথা বলেন। সায়ন্তিকাও বলেন, “আমরা তারকা হিসাবে নয়, দিদির সৈনিক হয়ে কাজ করতে চাই।”
ঘটনা হল, এই সব তারকা তথা দিদির সৈনিকরা টিকিট পেলেও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য, দেবাংশু ভট্টাচার্যরা টিকিট পাননি। তৃণমূল যাঁরা প্রথম দিন থেকে করছেন, তাঁরা এই প্রার্থী তালিকা দেখে কী ভাবছেন, তাও এখন পরিষ্কার।
তবে পর্যবেক্ষকরা অনেকে বলছেন, একটা বিষয় হয়তো পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। তা হল, তাঁর দল ও সরকারের বিরুদ্ধে যে তীব্র প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা তৈরি হয়েছে তা মমতা বুঝতে পারছেন। এই পদক্ষেপ সেই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা ঢাকার চেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে, যাতে গ্ল্যামারের আলোয় ঢাকা পড়ে যায় ভাঙা রাস্তা, অনুন্নয়ন, দুর্নীতির অভিযোগ, সাংগঠনিক দুর্বলতা, গোষ্ঠী কোন্দল– এমন অনেক কিছুই।