
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আফগানিস্তানের বামিয়ন উপত্যকায় পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা ছিল এক সুবিশাল বুদ্ধমূর্তি। বিশ্বের বৃহত্তম বুদ্ধমূর্তির তকমা ছিল তার। খাড়া পাহাড়ের গায়ে সে অদ্ভুত সুন্দর প্রাচীন ভাস্কর্য দেখতে প্রতি বছর হাজারো পর্যটক ভিড় করতেন বামিয়ানে। ৫৪৪ থেকে ৫৯৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বানানো, কাবুল থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে, আট হাজার ফুটেরও বেশি উচ্চতার পাহাড়ের গায়ে ১২৫ ফুট উঁচু সেই মূর্তি ছিল ইতিহাসের বিস্ময়।
২০০১ সালের মার্চ মাসে এক তালিবানি হানায় গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায় এ অমূল্য ইতিহাস। মূর্তিপুজোর বিরোধিতা করতে গিয়ে তালিবানদের একের পর এখ মূর্তি ভাঙা নতুন কিছু ছিল না। কিন্তু বামিয়ানের এই বুদ্ধমূর্তি শুধু তো একটি ‘মূর্তি’ ছিল না, এটি ছিল ইতিহাসের দলিল। প্রাচিন বৌদ্ধধর্মের এক অভূতপূর্ব নিদর্শনও বটে। বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে গেছিল এই ঘটনায়।
১৯ বছর পেরিয়ে গেছে। ফের আক্রান্ত সেই বামিয়ান। মঙ্গলবার সন্ধেয় মধ্য আফগানিস্তানের বাময়ান উপত্যকায় অবস্থিত বামিয়ান শহরে দুটি বিস্ফোরণে নিহত অন্তত ১৪ জন। বেশ কিছু মহিলা ও শিশু রয়েছেন তাঁদরে মধ্যে। রয়েছেন দু’জন পুলিশকর্মীও। বামিয়ানের পুলিশ প্রধান জবরদস্ত সাফাই বলেন, “রাস্তার ধারে বিস্ফোরকগুলি লুকিয়ে রেখেছিল হামলাকারীরা। শহরের মূল বাজারের কাছেই ভরসন্ধেয় এই কাণ্ড ঘটিয়েছে তারা। সেখানে মুসলিমদের শিয়া গোষ্ঠীর বহু মানুষ বাস করেন।”
ঘটনায় ৫০ জনের বেশি জখম হয়েছেন। তদন্তে জানা গেছে, দুটি ম্যাগনেটিক বোমা ব্যবহার করেছিল দুষ্কৃতীরা। এখনও কোনও সংগঠন এই অপরাধের দায় স্বীকার করেনি। সন্দেহের তির তালিবানের দিকে হলেও, তারা ঘোষণা করেছে, এ কাজ তাদের নয়।
বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরেও বহু পর্যটক একানে আসতেন বেড়াতে। পাহাড়ের কোলে এই উপত্যকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চোখ জুড়িয়ে দেয়। কিন্তু বারবারই সে সৌন্দর্যের গায়ে রক্তের ছিটে লেগেছে গত দু-তিন দশক ধরে। কখনও বন্দুকবাজের হামলায় কখনও বা বোমা বিস্ফোরণে প্রাণ গেছে বহু সাধারণ মানুষের। তেমনই একটা ঘটনা ঘটে গেল আজ, মঙ্গলবার সন্ধেয়।
১৯৯০ সাল থেকেই তালিবানের লক্ষ্য আফগানিস্তানের শিয়া মুসলমানরা। কাবুল ও তার সংলগ্ন এলাকায় বহুবার হামলার মুখে পড়েছে শিয়া-অধ্যুষিত বসতিগুলো। তথ্য বলছে, এই বছরের প্রথম ৯ মাসের মধ্যে অন্তত ৬ হাজার জন আফগান মানুষ আহত বা নিহত হয়েছেন তালিবানি সংঘর্ষে।