
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: পুজো নিয়ে এবছরও জেলার মানুষের আনন্দ, উৎসাহের শেষ নেই। কিন্তু জানেন কি, এই মুহূর্তে আপনার জেলায় করোনার হাল কেমন? সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী পূর্ব বর্ধমানে নতুন করে গত ২৪ ঘণ্টাতে আক্রান্ত হয়েছেন ১১৫ জন।
করোনা তার গতিবিধি যতই বাড়াক মানুষের কী এসে গেলো তাতে! একটা বছরও পুজো মিস করা যাবে না আমাদের! তাই করোনায় আক্রান্তের হার যতই বাড়ুক, মন্ডপের ভিড় কমবে না। লাইন দিয়ে ভিতরে এসে প্যান্ডেল হপিং থেকে শুরু করে মাস্ক খুলে সেলফি তোলা,পুজোর মধ্যে সবই চলল জোরকদমে। এমন দৃশ্য দেখে মনে হতেই পারে দেশ থেকে কোভিড ভ্যানিশ হয়ে গেছে।
অন্যদিকে বর্ধমানের একমাত্র কোভিড হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রশাসনের সর্তকবার্তাকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সাধারণ মানুষ পুজোর আনন্দে মেতে উঠেছেন। উচ্চ আদালত নিয়মের পরিধি বেঁধে দিলেও, কে শোনে কার কথা! পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছবি তোলা থেকে জমিয়ে ঠাকুর দেখা- সবই চলেছে।
তবে এই উল্টো ছবিও ধরা পড়েছে। কিছু জায়গাতে কেবল মাইক বেজেছে আবার কোথাও কোথাও প্যান্ডেলে নিয়ম মেনেই সাধারণ মানুষকে ভেতরে ঢুকিয়েছেন পুজো কর্তৃপক্ষ।
প্রতিবছর জি টি রোড; আলমগঞ্জ আর বড়শুল কিংবা মেমারিতে মানুষের ঢল নামে। কাতারে কাতারে লোক রাস্তায় নামে। পুজোর প্রথম তিনদিন, দু একটি ক্ষেত্র ছাড়া, কমবেশি ফাঁকাই ছিল পথঘাট। গতকাল নবমী সন্ধ্যায় আবার মানুষের ঢল নামল পথে। জি টি রোডেই দেখা গেল দু’রকম ছবি। কেউ নিয়ম মানছেন। কেউ মানছেন না। নো এন্ট্রি জোনেও চলছে দেদার এন্ট্রি। পুলিশকে কোনওরকম পাত্তা না দিয়েই নবমীর জি টি রোডে চোখে পড়ল মানুষের জমায়েত ।
কোভিড সংক্রমণের প্রথম পর্বে বর্ধমানে আক্রান্তের সংখ্যা বেশ কমই ছিল। লকডাউনের দ্বিতীয় পর্বের শেষ দিক থেকে সব নিয়ম শিথিল হয়ে যায়। শুরু হয় একশ্রেণীর মানুষের বাজার-বিলাস। পুজোর আগে শপিং – বাজার, মলগুলিতে দেদার ভিড়। এই নির্বুদ্ধিতার মূল্য দিতে হচ্ছে বর্ধমানকে। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। দফায় দফায় স্থানীয়ভাবে লকডাউন ঘোষণা হয়েছে বর্ধমান শহর সহ বেশকিছু এলাকায়। গত কদিনে জেলায় প্রতিদিন একশোর আশেপাশেই থেকেছে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা। এর ফলে চিকিৎসার জন্য প্রায়ই সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে নন-কোভিড রোগীদের। সবমিলিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
পুলিশ থেকে সিভিক ভলেন্টিয়ার- প্রত্যেকে উদয়াস্ত খাটছেন। সরকারি বেসরকারি নানা স্তরে প্রচার চলেছে লাগাতার। পুজোয় ভিড় এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মানার অনুরোধ জানানো হচ্ছে প্রশাসনের তরফেও। কিন্তু চোখের আড়াল হতেই নিয়মের ফাঁক গলে ভিড় বাড়ানোর চেষ্টাও চোখে পড়ল পুজোর দিনগুলোতে। পুজো পরবর্তী সংক্রমণের হার কোথায় দাঁড়ায়, সেটাই এখন দেখার।