শেষ আপডেট: 9th December 2022 09:33
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ‘রাধুবাবু হলেন ভারতীয় যন্ত্রসঙ্গীতের নীরব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।’ পণ্ডিত রাধিকামোহন মৈত্র (১৯১৭-’৮১) সম্পর্কে এ কথা বলেছিলেন সত্যজিৎ রায়। ভারতের ধ্রুপদী সঙ্গীতকে সাধনার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কেবল বাদন নয়, নানা বাদ্যযন্ত্রের সৃজন ও তাতে প্রাণপ্রতিষ্ঠার কারিগর বলা হত পণ্ডিত রাধিকামোহনকে। এই সুরতাপসের হাতে সুর-তাল-ছন্দ বশ মানত অবলীলায়। সুরবাহার, সুরশৃঙ্গার ও সেতার মিলিয়ে তিনি সৃষ্টি করেছিলেন 'মোহনবীণা'। সেতার, সুরশৃঙ্গার, ভারতীয় ব্যাঞ্জো, সুররবাব এবং সবচেয়ে প্রাচীন ধ্রুপদী রবাবও ছিল তাঁর সংগ্রহে। পণ্ডিত রাধিকামোহন যন্ত্রের সৃজন শুধু নয়, তার সংরক্ষণও করতেন। ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীত ঘরানাকে তিনি বাঁচিয়ে রেখেছিলেন তাঁর সৃষ্টির মধ্যে। এবার সেই পথেই হাঁটছেন সঙ্গীতশিল্পী ও বাদ্য়কর জয়দীপ মুখোপাধ্যায় (Joydeep Mukherjee)।
পণ্ডিত রাধিকামোহনের তৈরি মোহনবীণা বিলুপ্ত হতে চলেছিল। সুপ্রাচীন সুরশৃঙ্গার যন্ত্রও এখনকার শিল্পীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। জয়দীপবাবু এই যন্ত্রসম্ভার শুধু সংরক্ষণই নয়, তার বাদনও করে চলেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। পণ্ডিত রাধিকামোহন মৈত্রের শিষ্য প্রণব কুমার নাহার কাছে তালিম নিয়েছেন জয়দীপবাবু। নিজের সঙ্গীত গুরুর কাছেই শুনেছিলেন পণ্ডিত রাধিকামোহনের অমর সৃষ্টির কথা। তারপরেই ভারতের সুপ্রাচীন এইসব বাদ্যযন্ত্রের সংরক্ষণের কথা ভাবেন তিনি। শুধু সংরক্ষণই নয়, বিলুপ্তপ্রায় সেইসব বাধ্যযন্ত্রে সুরের ঝঙ্কার তুলে তাদের নবজীবনও দিয়েছেন জয়দীপবাবু। এই বছর সুরশৃঙ্কার ও সরোদের জন্য সঙ্গীত নাটক অ্য়াকাডেমি ও উস্তাদ বিসমিল্লা খান যুব পুরস্কার পেয়েছেন জয়দীপবাবু। সুরশৃঙ্গার বাজানোর জন্য সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমির গত ৭০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও শিল্পী পুরস্কার পেলেন।
সুরশৃঙ্গার যন্ত্রটি নতুন করে সৃজন করেছেন জয়দীপবাবু। পণ্ডিত রাধিকামোহনও একসময় সরোদ বাদক ছিলেন। লখনউতে উস্তাদ সাদিক আলির সঙ্গে সুরের যুগলবন্দি হয়েছিল তাঁর। উস্তাদ সাদিক বাজিয়েছিলেন বীণা, আর পণ্ডিত রাধিকামোহনের সুরশৃঙ্গার দর্শকদের বিভোর করে দিয়েছিল। একসময় নিজেই উদ্যোগী হয়ে শিষ্যদের কথা ভেবে বিভিন্ন মাপের সরোদও তৈরি করাতে শুরু করেছিলেন পণ্ডিত রাধিকামোহন। বাদ্যযন্ত্রের প্রতি তাঁর এই প্রেমকে বাঁচিয়ে রেখেছেন জয়দীপবাবু। দেশের নানাপ্রান্তে বহু সঙ্গীত আসরে সুপ্রাচীন এইসব বাদ্যযন্ত্রকে পরিবেশন করেন নতুন আঙ্গিকে। তাঁর হাতে প্রাণ পায় মোহনবীণাও। বিভোর হয়ে ভারতীয় সঙ্গীতকে অস্থিমজ্জায় অনুভব করেন দর্শকরা।
শিল্পী, বাদ্যকর জয়দীপ মুখোপাধ্যায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন। বিলুপ্তি নয় নবসৃজনই তাঁর সঙ্গীত সাধনার লক্ষ্য। অবলুপ্ত যন্ত্রের পুনর্জীবনের কারিগর জয়দীপবাবু শুধু বাংলার নন, এই দেশেরও গর্ব।