
দ্য ওয়াল ব্যুরো : “সরকার সকলের জন্য কাজ করবে। এক্ষেত্রে জাতপাত বা ধর্মের বিচার করা হবে না। কিন্তু কেউ যদি আমাদের মেয়েদের বিরুদ্ধে কিছু করার চেষ্টা করে, তাকে ধ্বংস করব। যদি কেউ ‘লাভ জেহাদ’-এর নামে ধর্মান্তরের চেষ্টা করে, তাকে ছাড়ব না।” বৃহস্পতিবার এমনই হুমকি দিলেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চহ্বণ।
কিছুদিন আগেই মধ্যপ্রদেশ সরকার তথাকথিত লাভ জেহাদের বিরুদ্ধে আইনের খসড়া তৈরি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, কেউ যদি ধর্মান্তরের লক্ষ্যে বিবাহ করে, তার ১০ বছর পর্যন্ত জেল হবে। রাজ্যের মন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র বলেন, যে ধর্মগুরু এই ধরনের বিবাহ দেবেন, তাঁরও পাঁচ বছর জেল হবে।
গত ফেব্রুয়ারিতে সংসদে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছিল, চলতি আইনে লাভ জেহাদের কোনও সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি। কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থা লাভ জেহাদ নিয়ে মামলাও করেনি। কিন্তু গত ৬ নভেম্বর কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা বলেন, লাভ জেহাদের নামে যাতে ধর্মান্তরিত না করা হয়, সেজন্য তাঁর সরকার আইন আনতে চায়। একইদিনে হরিয়ানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভিজ বিধানসভায় জানান, তাঁর রাজ্যের সরকারও লাভ জেহাদের বিরুদ্ধে আইন করার কথা ভাবছে। হিমাচল প্রদেশের সরকার গত বছরই এক আইন পাশ করে বলেছে, গায়ের জোরে, লোভ দেখিয়ে বা বিয়ের নাম করে কারও ধর্মান্তর করা যাবে না।
কিছুদিন আগে এলাহাবাদ হাইকোর্ট তথাকথিত লাভ জেহাদের বিরুদ্ধে রায় দেয়। গতবছর অগাস্টে উত্তরপ্রদেশে সালামত আনসারি নামে এক মুসলিম যুবক প্রিয়ঙ্কা খারওয়ার নামে এক হিন্দু তরুণীকে বিবাহ করেন। প্রিয়ঙ্কার বাবা-মা সালামতের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। এলাহাবাদ হাইকোর্ট ওই মামলা বাতিল করে দিয়েছে।
হাইকোর্টের দুই সদস্যের বেঞ্চ বলেছে, “কারও ব্যক্তিগত সম্পর্কে বাধা দেওয়া যায় না। তাহলে ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়। দু’জন মানুষের পরস্পরকে বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা আছে।”
সালামত আনসারি কুশীনগরের বাসিন্দা। তাঁকে বিবাহের আগে প্রিয়ঙ্কা ধর্মান্তরিত হন। তখন তাঁর নাম হয় আলিয়া। বিয়ের পরেই প্রিয়ঙ্কার বাবা-মা সালামতের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, সালামত তাঁদের মেয়েকে ‘অপরাধীর মতো’ অপহরণ করেছে। প্রিয়ঙ্কা তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে। অভিযোগ, বিয়ের সময় মেয়েটি ছিল নাবালিকা। তাই সালামতের বিরুদ্ধে কঠোর পকসো আইনে মামলা করা হয়।
এফআইআর বাতিল করার জন্য সালামত কোর্টে আবেদন করেন। এলাহাবাদ হাইকোর্ট ১১ নভেম্বর তাঁর পিটিশন শোনে। ১৪ পাতার অর্ডারে বিচারপতি বিবেক আগরওয়াল ও বিচারপতি পঙ্কজ নাকভি বলেন, “কোনও ব্যক্তি যে ধর্মেরই মানুষ হোন না কেন, তিনি নিজের খুশিমতো জীবনযাপন করতে পারেন। প্রত্যেকেরই ব্যক্তিস্বাধীনতা আছে।”